![](https://jagarantripura.com/wp-content/uploads/2019/07/crime-scene-tape-1024x576.jpg)
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ আগস্ট ৷৷ স্বামী স্ত্রীর একসাথে আত্মহত্যার ঘটনা এবং অন্য জায়গায় স্ত্রীকে খুন করার ঘটনায় রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেমন প্রশ্ণের মুখে ঢেলে দিয়েছে তেমনি রাজ্যের মানুষের যে অভাব অনঠন দিনদিন মারাত্মক রূপ নিচ্ছে তা প্রকাশ পাচ্ছে৷ ঋণের জালায় ফাঁসিতে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে চলেছে৷
গলায় ফাঁস জড়িয়ে আত্মহত্যা করেছে এক দম্পতি৷ ঘটনাটি ধলাই জেলার অন্তর্গত আমবাসা মহকুমা ও থানাধীন সুধারামপাড়া এলাকায় সংঘটিত হয়েছে৷ দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রেম পর্বের শেষে গত আট মাস আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন পঙ্কজ দেব (২৬) এবং পাপিয়া দাস (১৯)-রা৷ সামাজিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়েছি৷
জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাত আনুমানিক নয়টা নাগাদ পঙ্কজ এবং পাপিয়া প্রতিদিনের মত পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভাত খেয়ে ঘুমোতে যায়৷ আজ সকাল আটটা নাগাদ তার ঘুম থেকে উঠছে না দেখে বাড়ির লোকজন তাদের ডাকাডাকি করতে থাকেন৷ কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোনও জবাব না পাওয়ায় তাঁরা শঙ্কিত হয়ে হইচই ফেলে দেন৷ তাঁদের চিৎকারে পাশের বাড়ির একজন এসে ঘরের কোনও এক জায়গায় ফাঁক গলিয়ে দেখতে পান পঙ্কজ এবং পাপিয়া গলায় ফাঁস জড়িয়ে ঝুলছে৷
খবর দেওয়া হয় পুলিশকে৷ ইত্যবসরে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশীদের ভিড় জমতে থাকে বাড়িতে৷ ইতিমধ্যে পুলিশ এসে প্রাথমিক তদন্ত করে মৃতদেহ নীচে নামিয়ে হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে ময়না তদন্তের জন্য৷
এদিকে দম্পতি কেন আত্মহত্যার করেছে, তার কারণ জানা যায়নি৷ তবে বলা হচ্ছে, পেশায় অটোচালক পঙ্কজ অতিরিক্ত ঋণের চাপে জর্জরিত ছিল৷ হয়তো এ-জন্যই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে সে৷ ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ এক মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে৷ অন্যদিকে মর্মান্তিক এই ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷
এদিকে, রাজধানী আগরতলা শহর সংলগ্ণ বড়জলার মধ্য পঞ্চায়েত পাড়ায় স্বামীর হাতে খুন হল স্ত্রী৷ নিহতের নাম সুপ্রিয়া দেবনাথ৷ অভিযুক্ত স্বামীর নাম মনীষ রুদ্রপাল৷ বড়জলার একটি বাড়িতে গত প্রায় একমাস ধরে তারা ভাড়া থাকত৷ বৃহস্পতিবার এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ শ্বাসরুদ্ধ করেই স্বামী মনীষ রুদ্রপাল তাকে হত্যা করেছে৷ ঘটনার সংবাদে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে৷ বড়জলার মধ্য পঞ্চায়েত পাড়ায় এক গৃহবধূকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷
জানা যায়, প্রায় একবছর আগে ভালবাসার ফাঁদে পড়ে প্রথম পক্ষের স্বামী ও এক শিশু সন্তানকে ফেলে মনীষের হাত ধরে নতুন করে সংসার জীবনে আবদ্ধ হয় সুপ্রিয়া৷ প্রায় একবছর মনীষের বাড়িতেই ছিল সুপ্রিয়া৷ মনীষ পেশায় গাড়ি চালক৷ গত প্রায় একমাস আগে বড়জলা মধ্য পঞ্চায়েত পাড়ায় ঘরভাড়া করে তারা দু’জনে দাম্পত্য জীবন কাটাতে শুরু করে৷ এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিয়ার কোন কথাবার্তা না শুনে সন্দেহ হয় বাড়ির মালিকের৷ তখনই মালকিনি খোঁজ করেন৷ সুপ্রিয়ার স্বামী মনীষ তখন জানায় সে ঘুম থেকে উঠছে না৷ ডাকলে সাড়া দিচ্ছে না৷ যে ভাড়া বাড়ি ঠিক করে দিয়েছিল তার কাছে ফোন করার পর সাড়া না পেয়ে মনীষ ওই বাড়ির উদ্দেশ্যে যায়৷ সেখান থেকে আর ফিরে আসেনি৷ তখনই খবর দেওয়া হয় সুপ্রিয়ার বাপের বাড়িতে৷ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার মানুষজনও ছুটে আসেন৷ খবর পাঠানো হয় থানায়৷ মহিলা থানার পুলিশ এসে ভাড়া বাড়ির ঘর থেকে সুপ্রিয়ার নিথর দেহ উদ্ধার করে৷ গায়ে আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার৷ প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে৷ পুলিশ সেখান থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করলেও অভিযুক্তকে আটক করতে পারেনি৷ সে পালিয়ে গেছে৷
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিয়ার মা জানান, প্রায় দুইবছর আগে সুপ্রিয়া সামাজিক প্রথায় বিয়ে হয়েছিল৷ তার একটি একবছরের কন্যা সন্তান রয়েছে৷ মনীষ রুদ্রপাল সুপ্রিয়ার শ্বশুরবাড়িতে আসা-যাওয়া করত, সেই সুবাদে সুপ্রিয়ার সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে৷ এমনকি স্বামী ও একবছরের শিশু কন্যাকে ফেলে স্বামীর গৃহ ছেড়ে মনীষের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় বার বিয়ে করে সুপ্রিয়া৷ এরপর প্রায় একবছর সুপ্রিয়া তার দ্বিতীয় শ্বশুরবাড়িতেই দাম্পত্য জীবন কাটায়৷ প্রায় একমাস আগে বড়জলার মধ্য পঞ্চায়েত পাড়ায় ভাড়া বাড়িতে আসে৷ এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে তার কাছে খবর যায় সুপ্রিয়ার নাকি মৃত্যু হয়েছে৷ খবর পেয়ে ভাড়া বাড়িতে এসে তিনি তার মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পান৷ মৃতার মা অভিযোগ করেছেন তার দ্বিতীয়বারের স্বামী মনীষ রুদ্রপাল তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে৷ মহিলা থানার পুলিশ এ ব্যাপারে একটি হত্যা সংক্রান্ত মামলা গ্রহণ করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে৷ মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী৷