নতুন ভারতবর্ষ গড়ার স্বপ পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে রাজ্যের বর্তমান সরকার দায়বদ্ধ : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ আগস্ট ৷৷ আমজনতার জন্য গত ৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী যেসব বলিষ্ঠ সময়োপযোগী কর্মসূচি প্রণয়ন করেছেন এবং যে সমস্ত প্রকল্প এখন রূপায়িত হচ্ছে এর ফলে মানুষ ২০২২ সালে এক নতুন ভারতবর্ষ গড়ার স্বপ্ণ দেখছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্ণ পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে রাজ্যের বর্তমান সরকারও দায়বদ্ধ৷ আজ সকালে আসাম রাইফেলস ময়দানে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে রাজ্য সরকার জনকল্যাণে যে সমস্ত কাজ করে আসছে তার একটা চিত্র এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচির রূপরেখা তুলে ধরেন৷

রাজ্যের বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা সাথ, সবকা বিকাশ নীতিকে পাথেয় করে কাজ করে কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন শারদোৎসবের প্রাক্কালে আগামী ১ সেপ্ঢেম্বর থেকে আগরতলা-বিলোনিয়া ও সাব্রুমের মধ্যে ৩ জোড়া ডেমো লোক্যাল ট্রেন যাতায়াত করবে এবং ধর্মনগর থেকে সাব্রুম পর্যন্ত ১ জোড়া ট্রেন চালু করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও ঘোষণা করেন রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরা পুলিশ এবং টিএসআর-এর কনস্টেবল-রাইফেলসম্যান, হেড কনস্টেবল-হাবিলদার পদমর্যাদাভুক্ত জওয়ান ও কর্মীদের সন্তানদের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধত্থ্যিমকে শীর্ষ স্থানাধিকারীদের চিফ মিস্টিস্টার্স মেটিটোরিয়াস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে৷

রাজ্যস্তরে মাধ্যমিকের তিনজন এবং উচ্চমাধ্যমিকের তিনজন অর্থাৎ মোট ছয়জন কৃতি ছাত্রছাত্রীদের এই পুরস্কারের মাধ্যমে উৎসাহিত করা হবে৷ প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পুরস্কারের নগদ অর্থমূল্য যথাক্রমে ১০ হাজার টাকা, ৯ হাজার টাকা এবং ৮ হাজার টাকা৷ প্রতিটি জেলাতেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের দুইজন করে স্থানাধিকারীদের পুরসৃকত করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছরের স্বাধীনতা দিবস আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ৷ স্বাধীনতার ৭২ বছর পর সত্যিকার অর্থেই দেশ অখন্ডতার পথে অগ্রসর৷ সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে৷ প্রথমত জম্মু-কাশ্মীর থেকে ধারা ৩৭০ এবং ৩৫-‘এ’ বিলোপ ও নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তিন তালাকের মতো কুপ্রথা সমাপ্ত করা৷ এই দুটি ঐতিহাসিক কাজের জন্য আমি ৩৭ লক্ষ ত্রিপুরাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অমিত শাহজিকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি৷ ৩৭০ ধারা বিলোপের ফলে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাদ্যায়, দীনদয়াল উপাধ্যায়, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ও ড. বাবা সাহেব আম্বেদকরের স্বপ্ণের সফল বাস্তবায়ন ঘটলো৷ দেশের একতা ও অখন্ডতা আরও মজবুত হলো৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রাম, গরিব, কৃষক আর মহিলা বর্তমান রাজ্য সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে৷ ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে ত্রিপুরার ইতিহাসে প্রথমবার নূ্যনতম সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬৫৪ মেট্রিকটন ধান খাদ্য দপ্তর সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করেছে৷ এর ফলে কৃষকদের প্রতি কেজিতে প্রায় ৫ টাকা থেকে সাড়ে ৫ টাকার মতো লাভ হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনায় এখন পর্যন্ত রাজ্যের ১,৮০,৬৪১ জন কৃষকের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১,৫১,০৩৪ জন কৃষকদের ২০০০ টাকা করে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়ে গেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা প্রকল্পে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের কৃষকদের বীমার আওতায় আনা হয়েছে৷ আগামী রবি মরশুমে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ২১,০০০ হেক্টর জমিকে বীমার আওতায় আনা হবে৷ কৃষকদের সমস্যা নিরসনের জন্য ১৪টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং মোট ৩৬টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ চলতি বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৯.৬২ লক্ষ মেট্রিকটন৷ তাছাড়া, ১ লক্ষ হেক্টর এলাকায় উন্নত প্রজাতির শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷

রাজ্যের প্রত্যেক কৃষককে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড প্রদানের জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে এমজিএন রেগা প্রকল্পে ১২৯.৬৭ লক্ষ শ্রমদিবসের কাজ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ গত ২০১৭-১৮ সালে পুরো ১ বছরে শ্রম দিবস সৃষ্টি হয়েচিলো ১৭৫.৯৬ লক্ষ৷ তিনি জানান, ভারত সরকার রেগার মজুরি বাবদ ২৮৪.৮৬ কোটি টাকা এই বছর বরাদ্দ করেছে৷ সরকার রেগার মজুরি ১৭৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯২ টাকা করেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ)-র গৃহনির্মাণ সম্পূর্ণ করার হার মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত মাত্র ২.৯০ শতাংশ চিলো৷ এখন তা ৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এই প্রকল্পটির সফল রূপায়ণের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সারা ভারতে পঞ্চম হয়েছে এবং এই অর্থবছরে রাজ্যকে ১০,৫০০টি ঘর নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবন-জীবিকা মিশনে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও হিমালয়ান রাজ্যগুলির শ্রেণিতে ত্রিপুরা ৭টি জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে৷ ধলাইজেলা ও সিপাহীজলা জেলাকে গ্রাম স্বরাজ অভিযানে ৭টি প্রকল্পের ১০০ শতাংশ বাস্তবায়নের জন্য পুরসৃকত করা হয়েছে৷

গ্রাম পঞ্চায়েতের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা অভিযান ‘সবকি যোজনা, সবকা বিকাশ’ এই অভিযানে ত্রিপুরা প্রথম স্থান অধিকার করেছে৷ ১৭ মাসে সব গ্রাম পঞ্চায়েত এবং নগর এলাকা ও পুরনিগমকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত ঘোষণা করেছে৷ এর আগে সাড়ে ৩ বছরে মাত্র ১৯টি গ্রাম উন্মুক্ত স্থানে শৌচমুক্ত হয়েছিলো৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, রাজ্য সরকার মহিলাদের স্ব-শক্তিকরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে, যাতে সুস্থ সমাজ গঠন সম্ভব হয়৷ তিনি জানান, রাজ্যের মহিলাদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে ৮টি জেলায় মনিটরিং কমিটি ও স্পেশাল সেল গঠন করা হয়েছে৷ পশ্চিম জেলার নির্ভয়া কেন্দ্র বর্তমানে কাজ করছে৷ খুব শীঘ্রই ১৮১ ডায়ালিং নম্বরে হেল্পলাইনের ব্যবস্থা শুরু হবে৷ যে কোনও মহিলা পুলিশ অথবা মহিলা কমিশন ছাড়াও এই নম্বরে নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারবেন৷ সরকারের প্রচেষ্টার পলে অপরাধ দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের ফলে রাজ্যে প্রায় ১০ শতাংশ মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ হ্রাস পেয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের নেশামুক্ত অভিযান আজ জনআন্দোলনে রূপ নিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *