বিগত বামফ্রন্ট সরকার অনেক প্রকল্প নিয়েছিল উপযুক্ত অর্থের সংস্থান না করেই ঃ উপ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ নভেম্বর৷৷ রাজ্যে বিজেপি আইপিএফটি সরকার ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যের আর্থিক অবস্থার বিবরণ সংক্রান্ত শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছিল৷ শ্বেতপত্রে দেখানো হয়েছে বিগত বামফ্রন্ট সরকার অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল উপযুক্ত অর্থের সংস্থান না করেই৷ সেইজন্য বিভিন্ন প্রকল্প সম্পন্ন করতে আমাদের প্রয়োজন হবে ১৬৮৮.৯০ কোটি টাকা৷ আজ বিধাসভায় বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক কর্তৃক আনীত একটি বেসরকারী প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে উপ মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্র্ম একথা বলেন৷ বেসরকারী প্রস্তাবটি ছিল নিম্নরূপ ঃ পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আর্থিক বোঝার দায়ভার বর্তমান সরকারের উপর বর্তানোর ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে ও রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে ত্রিপুরা রাজ্যকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার জন্য ত্রিপুরা বিধানসভা কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছে৷

আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থ মন্ত্রী তথা উপ মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা এই বেসরকারী প্রস্তাবকে সমর্থন করে বলেন, পূর্বতন সরকারের দ্বারা রাজ্যের অর্থ ব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনা না করার জন্য ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এফ আর বি এম টার্গেট পূর্ণ করতে সক্ষম হয়নি৷ যেখানে এফ আর বি এম টার্গেট জি এস ডি পি এর তিন শতাংশ সর্বোচ্চ হওয়া উচিত সেখানে ২০১৫ – ২০১৬ সালে তা গিয়ে দাড়িয়েছিল ৪.৮০ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে তা গিয়ে দাড়িয়েছে ৬৮.৩ শতাংশ৷ তিনি বলেন, রাজ্যের ব্যয়ের ক্ষেত্রে পূর্বতন সরকার বেশির ভাগ ব্যয় করেছে অনুন্নয়নমূলক খাতে এবং উন্নয়নমূলক খাতে যা ব্যয় করা হয়েছিল তাও বেশীর ভাগ করা হয়েছে রাজস্ব ব্যয়ের দেয়নি৷ এতে বোঝা যাচ্ছে বিগত সরকার রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কোন প্রাধান্য দেয়নি৷ এতে সরকারী ব্যয় ব্যবহারে দক্ষতা পরিলক্ষিত হয়নি৷ তিনি বলেন, ভারত সরকারের মহাহিসাব নিয়ামক ও নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুসারে দেখা গেছে খোলা বাজার থেকে প্রাপ্ত ঋণ ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর পর্যন্ত উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে৷

২০১২-১৩ অর্থ বৎসরে যেখানে খোলা বাজার থেকে মোট ঋণ প্রাপ্তির পরিমাণ ছিল ৪১০.৮ কোটি টাকা ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে তা গিয়ে দাড়িয়েছিল ৬৩৩৫.৬৪ কোটি টাকা৷ তার মানে পাঁচ বছরের খোলা বাজার থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল৷ মূলধনী খাতে ব্যয়ের নিরিখে দেখা যায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ঋণের টাকা খরচ হয়েছিল অনুন্নয়নমূলক খাতে৷ তিনি বলেন, যেখানে ঋণ জি এস ডি পি রেশিও ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে ছিল ২০৭ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৯১ শতাংশ৷

তিনি বলেন, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ এই পাঁচ বছরের সয়মকালে প্রত্যেক বছর ১০০ কোটি টাকার বেশী ক্রমাগত সাশ্রয় হয়েছে উপজাতি কল্যাণ ও তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তর৷ মূলধন খাতে সাশ্রয়ের গতি বিশ্লেষণ করার সময় দেখা গেছে যে উপজাতি কল্যাণ দপ্তরে তুলনামূলক সাশ্রয় ২০১২-১৩ তে ৩৫৪.৮৩ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬ – ১৭ তে ১০৮৯.০৮ কোটি টাকা হয়েছে৷ পাঁচ বছর ধরে ক্রমাগত সাশ্রয় থেকে এটা প্রতিফলিত হয় যে সার্বিক বাজেট প্রক্রিয়া বাস্তবোচিত ছিল না এবং তা সঠিক নির্ধারনের পাশাপাশি বিচক্ষণতার অভাব ছিল৷ তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত ১১১.১৭ কোটি টাকার ৭৬৩২ টি এ সি বিল ছিল এবং তা ডি সি সি বিল এর মাধ্যমে সমন্বয়ের জন্য বকেয়া পরে আছে৷ এতে বোঝা যায় বিগত সরকার কোন রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি৷ কিন্তু, আমাদের সরকার রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷

এই বেসরকারী প্রস্তাবটি উত্থাপন করে বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলের আর্থিক অব্যবস্থার কথা তুলে দরে বক্তব্য রাখেন৷ বেসরকারী প্রস্তাবের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেয় বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী৷ প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক বাদল চৌধুরী ও বিধায়ক ভানুলাল সাহা৷ আলোচনার শেষে এই বেসরকারী প্রস্তাবটি ধবনী ভোটে গৃহীত হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *