নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৪ নভেম্বর ৷৷ কেন্দ্রীয় সরকার দেশের জনগণের জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রকল্প চালু করেছ৷ এইগুলির মধ্যে যে প্রকল্পগুলি ত্রিপুরার ভৌগোলিক ও পরিবেশের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সেইগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে রূপায়ণ করতে হবে৷ তবেই সেই প্রকল্পগুলিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে৷ আজ প্রজ্ঞাভবনে ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোেগে এবং নীতি আয়োগের সহযোগিতায় তিনদিনব্যাপী চিন্তন শিবিরের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, যেকোন স্থানে প্রকল্প রূপায়ণ শুরু করার আগে ভালো করে সেই জায়গা পরিদর্শন করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে করতে হবে৷ তাতে প্রকল্পটি রূপায়ণে গুণগতমান বজায় থাকবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার জনগণের কল্যাণে যে সকল প্রকল্প চালু করেছে তা আমাদের রাজ্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রূপায়ণ করতে হবে৷ রাজ্য সরকার সেই দিশাতেই কাজ শুরু করেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে৷ রাজ্য সরকারও প্রধানমন্ত্রীর এই লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কাজ করছে৷ রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে দুধ উৎপাদনে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক দুর্বল পরিবারকে গরু কেনার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যের ৫০০০ পরিবারকে ২টি করে গরু কিনতে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এক্ষেত্রে মহিলাদের সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে এফসিআই-র মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ এরজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যবাসীকে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে৷ কারণ মানুষের ৫০ শতাংশ রোগই হল জলবাহিত৷ তাই এই প্রকল্পের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই সরকার কাজ শুরু করেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে, প্রকল্প সহজে ও কম সময়ে জনতার কাচে পৌঁছীত্রানো যায় সেই সকল প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা নিতে হবে৷ যেকোন কাজ রূপায়ণ করার জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে হবে৷ তবেই কোনো কঠিন কাজকে সহজভাবে সম্পন্ন করা যাবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনদিনব্যাপী চিন্তন শিবিরের কৃষি, পর্যটন, মঋস্য, প রাণী সম্পদ, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে৷ এইক্ষেত্রগুলিকে উন্নয়ন করার লক্ষ্যে আমাদের দ্বসকলকে মিশন মুডে কাজ শুরু করতে হবে৷ আগামী তিন বছরের মধ্যে এই ক্ষেত্রগুলির উন্নয়ন করে জনগণের মধ্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে৷ তবেই আমরা আগামী ৩ বছরের মধ্যে ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য বানানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছি তা বাস্তবায়ণ করা সম্ভব হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যটন এমন একটা ক্ষেত্র যা কম সময়ে অধিক রোজগার দিতে পারে৷ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই রাজ্য সরকার রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে উন্নয়ন করার বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷ রাজ্যে একটি ইন্টারন্যাশনাল বৌদ্ধিষ্ট ইউনিভার্সিটি স্থাপনের উদ্যোেগ নেওয়া হবে৷ এর মাধ্যমেও পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন৷ অনুষ্ঠানে নীতি আয়োগের বাইস চেয়ারম্যান ড রাজীব কুমার বলেন, তিনদিনব্যাপী এই চিন্তন শিবির নিশ্চয়ই ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্য বানানোর দিশা দেখাবে৷ আগামী ৩ বছরের মধ্যে ত্রিপুরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করবে৷ বাংলাদেশের চিটাগাং বন্দরের সঙ্গে ত্রিপুরার যোগাযোগ চালু হলে ত্রিপুরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বিজনেস গেটওয়ে হবে৷ এরফলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি উপকৃত হবে৷ চিন্তন শিবিরে যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃষি, দক্ষতা, উন্নয়ন, সবার জন্য ঘর, স্বাস্থ্য প্রসাসন, শিশু ও নারীর উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়গুলি অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে৷ এই বিষয়গুলি ত্রিপুরা রাজ্যে সফল রূপায়ণের ক্ষেত্রে নীতি আয়োগ সর্বতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে৷
অনুষ্টানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ড জিএসজি আয়েঙ্গার, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সুশীল কুমার ও রাজস্ব দপ্তরের প্রধান সচিব মনোজ কুমার৷ অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা দপ্তরের বিশেষ সচিব চৈতন্যমূর্তি৷