নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ এপ্রিল৷৷ বর্তমান রাজ্য সরকার কোনও মতেই গুণগত শিক্ষার সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করবে না৷ সংবিধান ও

শিক্ষার অধিকার আইন মেনেই টেট বোর্ডের মাধ্যমে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে৷ তবে, শিক্ষাঙ্গনে ২৫ বছর ধরে যে ধর্ণা সংসৃকতি সৃষ্টি হয়েছে, তাও বরদাস্ত করা হবে না৷ বুধবার মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ মঙ্গলবার বিএড এবং ডিএলএড পড়ুয়াদের বিক্ষোভ আন্দোলনের জেরে স্পষ্টিকরণ দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এদিন তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি ধর্ণা কর্মসূচী থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করেছেন৷
তাঁর কথায়, বিগত সরকার ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ না করার ফলে এই সতেরো বছরে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদন্ড সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে৷ শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা৷ বিগত সতেরো বছরে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ না করার ফলে রাজ্যের সুকলগুলিতে শিক্ষা ব্যবস্থা অচল হয়ে গেছে৷ তাছাড়া এই সতেরো বছরে প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের মতো শিক্ষক অবসর গ্রহণ করেছেন৷ শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, বর্তমানে রাজ্যে শিক্ষকের শূন্য পদ রয়েছে ১২ হাজার ২২২টি৷ শিক্ষকের এই বিশাল সংখ্যক শূন্য পদে পূরণের জন্য ত্রিপুরা টিচার রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে বলা হয়েছে৷ এই ১২ হাজার ২২২টি শূন্য পদের মধ্যে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক চাওয়া হয়েছে ৬২৭৬টি, স্নাতক (এলিমেন্টারি স্টেজে) শিক্ষক চাওয়া হয়েছে ১৩৫২টি, স্নাতক (সেকেন্ডারি স্টেজে) শিক্ষক চাওয়া হয়েছে ৪০৩৪ টি এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষক চাওয়া হয়েছে ৫৬০ টি৷ সাথে যোগ করেন, রাজ্যে সরকারী ও সরকার অনুমোদনপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে মোট ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৭ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৭৭ জন৷ তাঁদের ভবিষতের কথা চিন্তা করেই বছরে দুইবার এস টি জি টি, এস টি পি জি টি এবং টেট পরীক্ষা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার চিন্তাভাবনা করছে৷
শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, আমাদের রাজ্যে ৬টি বি এড কলেজ রয়েছে৷ এরমধ্যে দুইটি সরকারি এবং চারটি বেসরকারি৷ এই বি এড কলেজগুলিতে মোট ১ হাজার ১৭৬ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে তারাও টেট পরীক্ষা বসতে পারবে৷ কিন্তু টেট পরীক্ষায় পাশের পর যখন কাগজপত্র পরীক্ষা করা হবে তখন পাশের মার্কশিট দেখাতে হবে৷ তাঁর মতে, টেট এবং এসটিজিটি, এসটিপিজিটি এক বিষয় নয়৷ এ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ তিনি জানান, টেট-এর মাধ্যমে শিক্ষকের ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়৷ এর থেকে প্রয়োজনে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়ে থাকে৷ আর এসটিজিটি, এসটিপিজিটি হল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষক নির্বাচন করার পরীক্ষা৷
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ১২ হাজার ২২২টি শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় বি এড, বি এল এড পাশ করা প্রার্থী না পাওয়ায় রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে এককালীন ছাড় দেওয়ার জন্য আবেদন করে৷ কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের যে গাইড লাইন ও আইন রয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, প্রয়োজনবোধে রাজ্য সরকারি যদি অসুবিধাজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে এবং উপযুক্ত বি এড প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না থাকে তাহলে ঐ রাজ্য সরকারকে এককালীন ছাড় দেওয়া যেতে পারে৷ সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে এককালীন ছাড় দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি৷ কিন্তু এ নিয়ে বি এড, ডি এল এড-এ পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়৷ তারা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে গতকাল মহাকরণের মূল ফটকে ধর্ণায় বসেন৷ সেই বিষয়ে স্পষ্টিকরণ দেওয়ার জন্যই সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করা হয়৷ তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সপ্তাহের তিনদিন জনতার দরবার করেন৷ ইচ্ছা করলে ছাত্রছাত্রীরা সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করাতে পারতেন৷ কিন্তু শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে এভাবে ধর্ণায় বসে যাওয়াকে রাজ্য সরকার কোনওমতেই সমর্থন করে না৷ এমন কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সরসরি মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করতে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷