নিজস্ব প্রতিনধি, আগরতলা, ১৩ এপ্রিল৷৷ আমাদের দেশে যে সকল উৎসব, অনুষ্টান পালন করা হয়ে থাকে তার পেছনে কোনও না কোনও বিজ্ঞান ভিত্তিক কারণ লুকিয়ে থাকে৷ আজ পেঁচারথলের নবীনছড়া হাইসুকল ময়দানে ৪৫ তম রাজ্য ভিত্তিক বিঝু উৎসব ও মেলার উদ্বোধন করে এ কথা বলেন কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রী জুয়েল ওরাম৷ তিনি বলেন, আজকের দিনটি শুধু চাকমাদের জন্যই পবিত্র দিন নয়, আমাদের সকলের জন্যই পবিত্র দিন৷ এই পবিত্র দিনে সবাই একে অপরের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করেন৷ তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরায় যে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে তা জনগণের সরকার৷ এই সরকারের জনকল্যামূলক কাজে কেন্দ্র সরকার সর্বতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ত্রিপুরা রাজ্যে বর্তমানে ৭টি মডেল সুকল চালু রয়েছে৷ এরকম আরও ১৫টি মডেল সুকল স্থাপনের ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জুয়েল ওরাম৷ তিনি বলেন, প্রতিটি মডেল সুকল স্থাপনে ব্যয় হবে ২৫ কোটি টাকা৷ প্রতিটি মডেল সুকলে ৩২০ জন ছাত্র ও ৩২০ জন ছাত্রী বিনা বেতনে পড়াশোনা করতে পারবে৷ এরকম সুকলে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে৷ শুধু তাই নয়, রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার কেন্দ্রীয় সরকার তাতে সাহায্য সহযোগিতা করবে৷ তিনি বলেন, সেখানে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছেনি সেখানে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছানো হবে এবং রাজ্যের যেসব গরীব পরিবারের বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছনি সেসব পরিবারের বাড়িতে সৌভাগ্য যোজনায় বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করবে রাজ্য সরকার৷ এরজন্য রাজ্যে বর্তমান যে সরকার গঠিত হয়েছে তাকে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে৷
অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, চাকমা জনজাতিদের অনেক উৎসব আছে৷ এর মধ্যে যে উৎসব সমগ্র চাকমা সমাজকে উৎসাহিত করে তুলে তা হলো বিঝু উৎসব৷ আজকের এই দিনটি পবিত্র দিন৷ আমাদের সমাজের মধ্যে ঐক্য সম্প্রীতি এই উৎসবগুলির মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয়৷ তা বিহু হোক, চৈত্র সংক্রান্তি হোক কিংবা বিঝু উৎসব হোক৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্যের জনজাতি মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয়৷ ত্রিপুরায় পাহাড়ে গ্রামে যে রকম সুন্দর সুন্দর ফুল দেখা যায়, তেমনি জনজাতি সমাজের সুন্দর সুন্দর হস্তসিল্পের কাজও লক্ষ্য করা যায়৷ সেগুলিকে বাজারজাত করাই হলো একটা দায়িত্বশীল সরকারের কাজ৷ সেই ব্যবস্থা করার কাজ বিজেপি আইপিএফটি সরকার ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে৷ জনজাতিদের এই শিল্পকলাকে ভারতের সব রাজ্যেই নিয়ে যেতে চাই৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা পর্যটন ক্ষেত্রে ভারতের মধ্যে এক নম্বর রাজ্য হতে পারে৷ এরজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার৷ আমাদের রাজ্যে যে সকল পর্যটন স্থান রয়েছে তা দেশের অন্যান্য পর্যটন স্থান থেকে কম নয়৷ দেশের মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আফ্রিকাতে যান আমাজন নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে৷ কিন্তু আমাদের রাজ্যে অমরপুরের ছবিমুড়ার সৌন্দর্য আমাজনের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়৷
মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব আরও বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থেকে প্রকৃতি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে নিজের জীবনশৈলী তৈরী করাই হলো ইকো-ফ্রেন্ডলিং জীবনযাপন৷ আমাদের রাজ্যের জনজাতিরা পাহাড়ের কোলে বাস করে প্রকৃতির সঙ্গেই জীবনযাপন করেন৷ পাহাড়ে জুম চাষীরা ফসল লাগিয়ে নতুন বছরে নতুন মানসিকতা নিয়ে ভগবানের আশীবাদ পেতে চান৷ জুম চাষের মাধ্যমেই তাদের আনন্দ উৎসব প্রকাশ পায়৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ হলো এমন এক দেশ যে দেশের কৃষ্টি, ,সংসৃকতি সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ভিত্তিক৷ বিশ্বের কোনও দেশেই শুনিনি যে সূর্যের দিকে তাকিয়ে সময় বলে দেয়৷ কিন্তু আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা এটা বলে দিতে পারেন৷ তিনি বলেন, আজকের এই উৎসবে ভারতীয় সভ্যতা, কৃষ্টি ও সংসৃকতিকে বারবার স্মরণ করা হচ্ছে কারই এই মেলা প্রাঙ্গণ তার উদাহরণ প্রস্তুত করেছে৷ আমরা আধুনিকতার দিকে অগ্রসহ হলেও বিঝু উৎসবকে ভুলিনি৷ আমরা যখন উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠি তখন জাত পাত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরের ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা করি৷ এটাই উৎসবের প্রকৃত সার্থকতা৷ বিঝু যেমন নতুন মানসিকতা, নতুন দিশা তৈরী করে ঠিক তেমনি রাজ্যে নবগঠিত বিজেপি – আইপিএফটি সরকারও ত্রিপুরাকে নতুন দিশাতে নিয়ে যাবে৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী সবকা সাথ সবকা বিকাশ ও পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলিকে অষ্টলক্ষ্মী করার স্বপ্ণ দেখেছেন, তা পূরণ করার জন্য বর্তমান রাজ্য সরকার সেই দিশাতেই কাজ করবে৷ তিনি এই বিঝু উৎসবের মধ্য দিয়ে ৩৭ লক্ষ ত্রিপুরাবাসীর সরকারকে শক্তিশালী করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন৷ অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী চাকমাদের ধর্মীয় রীতির ভবচক্র, অজাল, টঙ্গি এবং বিভিন্ন দপ্তরের স্টল পরিদর্শন করেন৷
2018-04-14