কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
‘ভুল, সবই ভুল/এ জীবনের/ পাতায় পাতায়/ যা লেখা সে ভুল’- অনেকদিন পর এ গানটি মনে করিয়ে দিল রাজ্য সিপিএম৷ এ গানের পরতে পরতে শুধু ভুলের তালিকা রয়েছে৷ সিপিএমের তালিকাও যেন এমনই ভুলে ভরা৷ দুদিন ধরে রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের যে কারণগুলো তুলে ধরেছেন তাতে স্পষ্ট বোঝা গেল যে, তাদের রাজনীতির দর্শন ঠিক ভাবে এগোয়নি৷ অনেকটা ভুলে ভরা ছিল৷ বিজেপি এবং আরএসএসের মোকাবিলা সিপিএম যে ভুল পথে এগিয়েছিল তাও প্রকারান্তরে বিজন ধরের বক্তব্যে উঠে এসেছে৷ তিনি দলের সাংগঠনিক দুবর্লতার কথা বলেছেন৷ কিন্তু দীর্ঘ ৩৫ বছরের একটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক দুবর্লতা কেন থাকবে? দল কি তাহলে ভুল পথে চালিত হয়েছে? আর স্বজনপোষণের বিষয়টি নেতৃত্বরা যে জানতেন না তা নয়৷ জেনেও কাকের মত চোখ বুঝে ছিলেন৷ হয়তোবা সিপিএম নেতৃত্বরা বিজেপিকে মুষিক ভেবেছিলেন৷ তাই তো দুর্নীতির যেমন লাগাম টেনে ধরেনি তেমনই ভুলে ভরা রাজনীতিও শোধরানোর প্রয়োজন বোধ করেননি৷
সত্য বটে, সিপিএমের ভুল স্বীকার করার হিম্মত রয়েছে৷ তাইতো অবলীলায় দীর্ঘ বছর পরেও তারা ভুলের রাজনীতি স্বীকার করেন৷ যেমন – এক সময়ে তারা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া কবি হিসেবে চিহ্ণিত করেছিলেন৷ পরবর্তীতে বুঝতে পারলেন যে কবিগুরু ছাড়া কোনও গতি নেই৷ তাই ঘটা করে কবিগুরুর সার্ধ শতবার্ষিকী রাজ্যজুড়ে এক বছর ধরে পালন করলেন৷ রবীন্দ্র সঙ্গীত হয়ে উঠলো বাম নেতাদের দিন রাতের সঙ্গীত৷ শয়নে স্বপনে বাম নেতারা তখন কবি গুরুকে দেখতেন৷ তবে বছরের পর বছর কবিগুরুকে ব্রাত্য করে রাখার বিষয়টিও তারা স্বীকার করেছিলেন৷ এক সময়ে বাম নেতারা কম্পিউটারের ঘোর বিরোধী ছিলেন৷ কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটার ছাড়া তাদের চলে না৷ তাদের সবচেয়ে বর ভুল ছিল তৎকালীন উপা সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা৷ তারা ভেবেছিলেন সমর্থন প্রত্যাহার করলে উপা সরকারের পতন ঘটবে৷ কিন্তু তা হয়নি৷ পরবর্তীতে অনেক বাম নেতা এমন সিদ্ধান্তকে ভুল বলে চিহ্ণিত করেছিলেন৷ সিপিএমের এক সময়ের কিংবদন্তি নেতা তথা পশ্চিমবাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বাবুর প্রধানমন্ত্রী হবার অন্তরায় ছিল সিপিএম পলিটব্যুরোর শীর্ষ নেতৃত্বরা৷ পরে এটিও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে অনেক বাম নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন৷
তবে কি সিপিএম জন্মলগ্ণ থেকেই ভুল রাজনীতি করে আসছে? সিপিএমের বর্তমানে করুন অবস্থা দেখে কিন্তু তাই মনে হচ্ছে৷ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে যেন সিপিএম নেতৃত্বরা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন৷ রাজ্যে ১৮ এর বিধানসভা নির্বাচনেও তাদের সেই মানসিকতার পরিবর্তন হল না৷ বিরোধী দলকে সব সময় তারা অবমূল্যায়ন করেছে৷ ভেবেছে হামছে বড় কোন হ্যায়? এমন ভাবনায় সিপিএম নেতৃত্ব ভুল রাজনীতির শিকার হয়েছেন৷ কিন্তু সেই ভুল শোধরানোর কোনও লক্ষণ তাদের মধ্যে দেখা যায়নি৷ যেমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির চুলচেরা বিশ্লেষণ তেমন তাদের গলদ ছিল ভুলের কাছে বার বার তাদের নতি স্বীকার করা৷ দাম্ভিকতার চূড়ান্তে গিয়ে পৌঁছলে এমন ভুল যে চোখে পড়ে না তারই জ্বলন্ত উদাহরণ হল ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়া সিপিএম৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *