কথার নাম লতা

সুবোধ ঘোষ
এখানে খাঁটি গাভীর দুধ পাওয়া যায় – রঙীন কাপড়ের বড় ব্যানারে বড় বড় অক্ষরে কথাটি লেখা৷ কাপড়ের এক পাশে হৃষ্টপুষ্ট এক গাভীর ছবি৷ ফুটপাতের এক কোনায় কাপড় দিয়ে ঘিরে দোকান বিছিয়ে বসেছে এক মদ্য বয়সু ভুড়িওয়ালা লোক৷ গায়ের গেঞ্জি পেটের উপরে তোলা৷ দেখা যাচ্ছে বিরাট বুক৷ তার পেছনে কাপড়ে বড় ব্যানারটি টাঙ্গানো৷ তার সামনে গ্যাসের চুল্লির উপর সাইজের একটি কড়াইতে টগবগ করে ফুটছে গরুর দুধ৷ এক পাশে মাঝারি এক থালায় চিনির স্তুপ৷ তারপাশে থরে থরে সাজানো রয়েছে ছোট সাইজের পাউরুটি৷ আর এক পাশে থালা ভর্তি বাটার৷ কাস্টমার এলে পাউরুটি দুটুকরা করে তাতে বাটার লাগিয়ে চিনিতে ডুবিয়ে একটি কাগজের টুকরায় পাউরুটির টুকরো দুটো রেখে কাস্টমারের হাতে তুলে দেয়৷ সেই সাথে গরম গরম একটি বাটি দুধ টেবিলের উপর রাখে৷ বাটার মাখানো পাউরুটি খেয়ে কাস্টমার এবার ধীরে ধীরে বাটি ভর্তি দুধে চুমুক দেয়৷
ব্যস্ততম জায়গা৷ মানুষের আনাগোনার শেষ নেই৷ বিশেষ করে অফিস আদালত শুরু এবং ছুটির পর খাঁটি গাভির দুধের বিক্রি দেদার চলে৷ দোকানে মালিক এজন নয়৷ তার হেল্পারও রয়েছে দুজন৷ একদম রমরমা বিজিনেস৷ দোকানের মালিককে দেখলে বোঝা যায় তার ঘরে লক্ষ্মীর ভান্ডার উপচে পড়ছে৷ সারাক্ষণ মুখে তৃপ্তির হাসি৷ সমানতালে চলছে হাঁক ডাক৷ যাত্রীরা কিছুক্ষণের জন্য তার দোকানে দাঁড়াচ্ছেন৷ কেউ বা শুধু এক বাটি দুধ খেয়ে চলে যাচ্ছেন৷ কেউবা পাউরুটি দুধ দুটিই সাবাড় করছেন৷ অনেক কাস্টমারের সাথে দোকানদারের যেন আন্তরিক সম্পর্ক ও গড়ে উঠেছে৷ পাউরুটি আর দুধ খেতে খেতে হাল্কা কথাবার্তা ও চলছে৷ এযে তার নিত্যদিনের রুটিন৷ তার দোকানে সব ধরনের কাস্টমারের আনাগোনা৷ সবার সাথে আলাপ আন্তরিক দোকান৷ কেউ তাকে বলছে দাদা৷ কেউবা বলছে কাকু৷ আবার ছোটরা ডাকছে দাদু বলে৷ দুধ বিক্রেতার কোনও আপত্তি নেই৷ যে যেই ভাবে ডাকুক না কেন তার ব্যবসা জমলেই হলো৷ অনেকের মাঝে প্রতিদিন তার দোকানে এক সাথে দুজন ছাত্র আসতো৷ সুকলে যাবার সময় তারা দু বাটি দুধ রোজ খেত৷ একদিন ওই দুজন ছাত্র তার দোকানে এসে দেখে দোকারা প্রায় ফাঁকা৷ এখজন হাঁক ছেড়ে বললো – দাদু, চটপট দুবাটি দুধ দাও৷ দোকানী হাসি মুখে তাদের সামনে দুবাটি দুধ এগিয়ে দিল৷ দুজনের মাঝে দুষ্টু যে জন সে এমনই কথাচ্ছলে জানতে চাইলো – দাদু, দুধ খাঁটি তো? দুধ বিক্রেতা যেন আকাশ থেকে পড়লো৷ বললো – দাদু, আমি কি তোমার কইছি দুধটা খাঁটি৷
দুষ্টু ছেলেটা যেন খাটি কেলো৷ বললো – ওই যে ব্যানারে লিখ্যা দিছ, গাভির দুধ পাওয়া যায়৷
দুধ বিক্রেতা তাকে বেরে ভান করে বললো – মিছাতো লিখি নাই৷ গাভিটাতো খাঁটি৷
আর দুধ ? জানতে চাইলো ছেলেটি৷
দুধ বিক্রেতার নির্লিপ্ত উত্তর – দাদু ভেজালের বাজারে খাঁটি দুধ কই পাইবা, কটি ঘাস কি কোনও খানে আছে? গুরু খাইয়া বেশি কইরা দুধ দিবো৷ খাইতাছে তো খট খট শুকনা খড়৷ এই খড় খাইয়া একাট গাভী কতটুকু দুধ দিবো, তুমিই কওতো দাদু?
দুষ্টু ছেলে উপসংহার টেনে বললো – তার মানে ভেজাল দুধ?
দাদু, কেডা ভেজাল না কও? আমিও ভেজাল, তুমিও ভেজাল৷ ভেজাল খাইয়া আমরা হগলে যে ভেজাল অইয়া গেছি দাদু? এই বলে দুধ বিক্রেতা কুট কুট করে হেসে উঠে৷ তার হাসির দমকে তার ভপুটি পর্যন্ত নেচে উঠে৷ দুষ্টু ছেলেটি তার বপুর দিকে চেয়ে বলে – দাদু, তোমার বপুটিও কিন্তু খাঁটি৷ তার কথা শুনে দুধ বিক্রেতা হো হো করে হেসে উঠে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *