রাজ্যের সব বিরোধী দলের একই চিত্র

সায়ন্তক চৌধুরী
১৩ সাল থেকে বিধানসভায় বিরোধী দল ছিল কংগ্রেস৷ তবে তাদের স্থায়িত্ব পাঁচ বছর থাকলেও বিধায়ক সংখ্যা কমে গিয়েছিল৷ কেন তা রাজ্যবাসীর অজানা নয়৷ শেষের দিকে তৃণমূল আল টপকা ছয় বিধায়ক পেয়েছিলেন৷ শেষ পর্যন্ত তারাও থাকলেন না৷ চলে গেলেন বিজেপিতে৷ তাই বিনাশ্রমে বিজেপি পেয়ে গেল ছয় বিধায়ক৷ ১৩ সাল থেকে ১৮ এ বিধানসভা নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত এমনই ছিল বিরোধীদের টানামানা অবস্থান৷ ১৮ এর নির্বাচনে বিধানসভায় বিরোধীদের আসনে বসলেন বামফ্রন্ট তথা সিপিএম৷ পঁচিশ বছর ধরে এক নাগাড়ে শাসন ক্ষমতায় থাকার পর বিরোধী আসনে বসলো সিপিএম৷ অনেকটা অপ্রত্যাশিত৷ কিন্তু, অবাক হবার মত নয়৷ তবে ১৮ এ কর্পূরের মত উড়ে গেল কংগ্রেস৷ বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছিল ১৩ সালে৷ সিপিএমের ভাগ্যাকাশে তখন উড়ছে লাল ঝান্ডা৷ আর ১৮ এ সিপিএম পরাজিত সৈনিক৷ পঁচিশ বছরের শাসন ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়লো দূরে বহূদূরে৷
১৩ এর বিরোধী দল এবং ১৮ এর বিরোধী দলের মাঝে এক জায়গায় যেন মিল রয়েছে৷ তা হল নেতাদের নিরাপদ স্থানে অবস্থান৷ ১৩ সালে কংগ্রেস গো হারার পর কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা অসহায় হয়ে পড়ে৷ তাদের উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন৷ সেই সময় কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা কাছে পায়নি নেতৃত্বদের৷ অসহায় কংগ্রেস কর্মীরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তখন হিমসিম খাচ্ছিল৷ অনেকে ঘর ছাড়া হল৷ অগ্ণি সংযোগ করা হল তাদের বাড়ি ঘরে৷ সেই সময় তাদের সান্ত্বনা দেবার মত কেউ ছিল না৷ বারবার শীর্ষ নেতৃত্বদের মোবাইলে ফোন করেও তাদের পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ৷ সেই সময় অনেক কর্মী সমর্থক দলত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল৷ কেননা তখন চাচা, আপন প্রাণ বাঁচার মত অবস্থা ছিল৷
১৮ এর নির্বাচনে কংগ্রেস অস্তিত্বের সংকটে পড়ল৷ সংগঠন ধীরে ধীরে তলানীতে এসে ঠেকালো৷ এমন কি নির্বাচনে প্রার্থী পাওয়াও দুস্কর হয়ে পড়ল৷ রাজ্যবাসীও বুঝতে পারলো যে কংগ্রেস শুধু বিরোধী ভোট কাটার জন্যে ভোটে লড়েছে৷ ভাব দ্বন্দ্বে ছিল ক্ষমতায় কারা আসেছে তা নিয়ে৷ কেননা, ১৮ এর নির্বাচনে আক্ষরিক অর্থে সিপিএমকে বেগ যেতে হল৷ কিন্তু এ বেগ যে এমন ভাবে সুনামি সৃষ্টি করবে তা ভাবতে পারেনি সিপিএম নেতৃত্বরা৷ এমন না ভাবার পেছনে যে অংহকার কাজ করেছে তা পরবর্তীতে সিপিএম নেতারাও স্বীকার করেছেন৷ ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়লো বাম তথা সিপিএম৷ গেরুয়ার ঝড়ে নিমেষে উড়ে গেল লাল বাহিনী৷ হতবাক সিপিএম নেতৃত্ব৷ স্থান পেল বিরোধী আসনে৷ তিন মার্চ ভোটে গণনার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত এমন ধারণা তাদের ছিল না৷ কিন্তু, বাস্তব যে বড় কঠিন৷ গণদেবতারা ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি যে করে নেয়৷ ফলে অসহায় হয়ে পড়ল ক্যাডাররা৷ পার্টি অফিস ভাঙচুর হল৷ ক্যাডাররাও আক্রান্ত হল যৎসামান্য৷ বিজেপি নেতৃত্বরাও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন যে, রাজ্যের কিছু স্থানে কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে৷ এবং এসব ঘটনা কঠোর হাতে দমন করা হয়েছে৷ তারপরও কিছু কথা থেকে যায়৷ ক্যাডারদের অভিযোগ, সেই সময় সিপিএম নেতারা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেননি৷ নিজেরা নিরাপদে থেকে শুধু বিবৃতি দিয়েছেন৷
তোপের মুখে পড়েছে তারা৷ তাদেরকে রক্ষার কোন দায় দায়িত্ব নেয়নি সিপিএম নেতৃত্বরা৷ ফলে ক্যাডারদের মাঝে ক্ষোভ পড়ে৷ শুরু হয় দলত্যাগের হিড়িক৷ যেমনটি ১৩ সালে কংগ্রেস দলে দেখা গিয়েছিল৷ বিজেপি ক্ষমতায় বসে শুরু করলো তাদের ছকে বাঁধা কাজ৷ তাই বলে সিপিএমের এমন হাল ভাবতেও কষ্ট হয়৷ পঁচিশ বছর ধরে একটি সংগঠন কীসের উপর দাঁড়িয়েছিল? সে কি রক্তচক্ষুর ভয়? সিপিএমের এমন দৈণ্যদশা দেখে এমন ভাবটা কী অপ্রাসঙ্গিক৷ এখানে মনে হয় রাজ্যের বিরোধী দল এক সূত্রে গাঁথা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *