নতুন মুখ ১২, মহিলা প্রার্থী বাড়ল ২, শরিকদের ঝুলিতে ১টি করে আসন, কঠিন সময়ে চমক নেই বাম প্রার্থী তালিকায়

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ জানুয়ারী৷৷ ঝঁুকি নিল না বামফ্রন্ট৷ অবশ্যই সিপিএম৷ তাই, প্রার্থী তালিকায় পুরনোদের

মঙ্গলবার বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা ঘোষণাকালে সিপিএম সহ অন্য শরিক দলের নেতৃত্বরা৷ ছবি নিজস্ব৷

উপরই আস্থা রেখেছে বামেরা৷ শুধু তাই নয়, শরিকদের দুটি আসনও এবার সিপিএম নিজেদের কাছেই রেখেছে৷ বিধানসভার ৬০টি আসনে প্রার্থী তালিকা মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েছে বামফ্রন্ট৷ তাতে, নতুন মুখ মাত্র ১২৷ এর মধ্যেও দুইজন রয়েছেন, তাঁরা আগেও বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম ৫৭টি এবং সিপিআই, আরএসপি এবং ফরোয়ার্ড ব্লক একটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷ এবারের প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়েছেন পাঁচজন বিধায়ক৷ বামফ্রন্টের নবনিযুক্ত আহ্বায়ক তথা সিপিএম রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিজন ধরের মতে, বামফ্রন্টের জয় সুনিশ্চিতের লক্ষ্যেই এই প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হয়েছে৷ এই সিদ্ধান্ত বামফ্রন্টের বৃহত্তর স্বার্থেই গৃহিত৷

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে আসন্ন নির্বাচনে বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন ফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর৷ তিনি জানান, সিপিএম ৫৭টি, সিপিআই ১টি, আরএসপি ১টি এবং ফরোয়ার্ড ব্লক ১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷ তাঁর কথায়, এবার নতুন মুখ রয়েছেন ১২ জন৷ তাঁদের মধ্যে ১০ জন কোনসময়ই বামেদের ব্যানারে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি৷ এদিকে, বর্তমান বিধায়কদের মধ্যে এবার পাঁচজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ তাঁরা হলেন, নিরঞ্জন দেববর্মা, ললিত দেববর্মা, ফয়জুর রহমান, সুবোধ দাশ এবং অরুণ কুমার চাকমা৷ তিনি আরো জানান, এবার প্রথমবারের মতো বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৬নং আগরতলা কেন্দ্রে সিপিআইএম প্রার্থী কৃষ্ণা মজুমদার, ৯নং বনমালীপুর কেন্দ্রে অমল চক্রবর্তী, ১২নং টাকারজলা কেন্দ্রে রমেন্দ্র দেববর্মা, ৪৭নং আমবাসা কেন্দ্রে ভরত রিয়াং, ৪৮নং করমছড়া কেন্দ্রে উমাকান্ত ত্রিপুরা, ৫৪নং কদমতলা-কূর্তী কেন্দ্রে ইসলাম উদ্দিন, ৫৮নং পানিসাগর কেন্দ্রে অভিজিৎ দে এবং ৮নং টাউন বরদোয়ালী কেন্দ্রে ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী বিশ্বনাথ সাহা ও ৩১নং রাধাকিশোরপুর কেন্দ্রে আরএসপি প্রার্থী শ্রীকান্ত দত্ত৷ তাছাড়া, ঝর্ণা দাস বৈদ্য এবং অনিল চাকমাকে আবারও প্রার্থী করেছে বামফ্রন্ট৷ ইতিপূর্বে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন দুজনই৷ ঝর্ণা দাস বৈদ্য জয়ী হতে না পারলেও, অনিল চাকমা বিধায়ক হয়েছিলেন৷ বহুদিন বাদে তাঁদের আবারও সুযোগ দিয়েছে বামফ্রন্ট৷ ঝর্ণা দাস বৈদ্য ১৪নং বাধারঘাট কেন্দ্রে এবং অনিল চাকমা ৫৯নং পেচারথল কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন৷

এদিকে, বর্তমান পাঁচ বিধায়ক বাদ পড়েছেন৷ শ্রীধর জানান, ১২নং টাকারজলা কেন্দ্রের বিধায়ক নিরঞ্জন দেববর্মা, ৪৭নং আমবাসা কেন্দ্রের বিধায়ক ললিত দেববর্মা, ৫৪নং কদমতলা-কূর্তী কেন্দ্রে বিধায়ক ফয়জুর রহমান, ৫৮নং পানিসাগর কেন্দ্রের বিধায়ক সুবোধ দাশ এবং ৫৯নং পেচারথল কেন্দ্রের বিধায়ক অরুন কুমার চাকমা৷ তাঁর কথায়, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই নিরঞ্জন দেববর্মা, ললিত দেববর্মা, ফয়জুর রহমান এবং সুবোধ দাশকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ তবে, সাংগঠনিক কাজে নিজেকে আরো বেশি করে যুক্ত করার জন্য বিধায়ক অরুন কুমার চাকমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিজনবাবু৷

তিনি আরও জানান, এবারের প্রার্থী তালিকায় মহিলা প্রার্থী রয়েছেন ৭ জন৷ গত নির্বাচনে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৫ জন৷ বামফ্রন্টের এবারের প্রার্থী তালিকায় সবচেয়ে প্রবীণ নিরাজয় ত্রিপুরা৷ তাঁর বয়স ৮০৷ সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী হলেন ঝুমু সরকার৷ তাঁর বয়স ৩৫৷ এদিকে, এবার যাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে সুবোধ দাশ এবং ফয়জুর রহমান সবচেয়ে বেশী সময় বিধায়ক পদে রয়েছেন৷ তাঁরা দুজনই ১৯৭৮ সাল থেকে বিধায়ক পদে রয়েছেন৷

প্রার্থী তালিকায় ছাটাই এবং নতুন মুখ এনেও খুব একটা চমক দিতে পারেনি বামফ্রন্ট, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ কারণ, এবারের প্রার্থী তালিকায় কেবলমাত্র চারজনকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছে বামেরা৷ অথচ, অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ এবং ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী সহিদ চৌধুরীও শারীরিক দিক দিয়ে অসুস্থ৷ বিধানসভার শেষ অধিবেশনেও অধ্যক্ষ রমেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ আবারও তিনি বিধানসভায় ফিরবেন কিনা সেবিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন৷ তার কারণ হিসেবে তাঁর দাবি, শারীরিক অবস্থা তাঁকে অনুমতি দিচ্ছে না সংসদীয় পদ সামলাতে৷

ইতিপূর্বে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছিলেন, এবারের প্রার্থী তালিকায় বহু নতুন মুখ দেখা যাবে৷ কিন্তু, তার বদলে পুরনোদের প্রতিই আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে৷ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বামফ্রন্টের নবনিযুক্ত আহ্বায়ক বিজন ধর এক প্রশ্ণের উত্তরে বলেন, সিপিআইএম তরুণদের প্রাধান্য দেয় না এমন নয়, তবে অভিজ্ঞতারও গুরুত্ব রয়েছে৷ তাই একেবারেই নতুন দশজনকে আনা হয়েছে৷

সেয়ানে সেয়ানে যেখানে লড়াই হবে এবারের নির্বাচনে, সেক্ষেত্রে সংসদীয় পদের অভিজ্ঞতা নেই, তাঁদের উপর কোনভাবেই ভরসা করতে পারেনি বামফ্রন্ট, তা প্রার্থী তালিকায় স্পষ্ট৷ কারণ, সিপিএমের তিনবারের ত্বত্ত্ব এদিন ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন বিজনবাবু৷ তাঁর কথায়, সংসদীয় পদে তিনবারের বেশি থাকা যাবে না, এমন কোনও নিয়ম লিখিত আকারে নেই৷ তাঁর দাবি, তিনবারের বেশি কাউকে প্রার্থী করা যাবে না এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷ তাছাড়া, রাজ্যের সামগ্রিক অবস্থায় যা প্রয়োজন ছিল, সেই মতোই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তাঁর মতে, সবটাই পার্টি এবং সামগ্রিক স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নিয়েছে দল৷ তাই, এনিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই৷  প্রসঙ্গত, সীতারাম ইয়েচুরিকে তিনবারের বেশি সাংসদ হওয়ায় পুণরায় রাজ্যসভায় পাঠায়নি সিপিএম৷ তিনবারের ত্বত্ত্ব নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত সেখান থেকেই৷

এদিকে, প্রার্থী তালিকায় শরিকদের গুরুত্ব অনেকটাই কমে যাওয়ায় তাদের মধ্যে কোনধরনের ক্ষোভ কিংবা মতানৈক্য রয়েছে কিনা সেই প্রশ্ণ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন বিজন ধর৷ তাঁর কথায়, বামফ্রন্টে ঐক্য আগেও ছিল, এখনও রয়েছে৷ তাঁর মতে, বামফ্রন্টের বৃহত্তর স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ কিন্ত, তাতে ফ্রন্টে কোন বিরোধ নেই৷ রাজ্যের সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ অবশ্য, এনিয়ে ফ্রন্টের শরিকরা এদিন প্রকাশ্যে কোন কথা না বললেও, শরিক দল আরএসপি’র রাজ্য সম্পাদক ইতিপূর্বে একাধিকবার বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *