নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, সেপ্ঢেম্বর৷৷ ত্রিপুরা রাজ্য সমবায় ইউনিয়ন পরিচালিত সেন্টার ফর কো-অপারেটিভ ম্যানেজমেন্ট এর নবনির্মিত আবাসগৃহ সমবায়িক মিলনতীর্থ এর আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বারোদঘাটন করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ত্রিতল এই আবাস গৃহটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা৷ এটি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় ২ বছর৷ আজ বিকালে অরুন্ধুতীনগরস্থিত সমবায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশে সুদুশ্য এই আবাস ভবনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সমবায়ের ভূমিকা অন্যতম৷ রাজ্য সরকার সকল অংশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে৷ গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সমবায় আন্দোলনে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ রাজ্যের এ উন্নয়ন অশুভ শক্তির পছন্দ হচ্ছেনা৷ তাই তারা জাতি উপজাতির মানুষের একতা ভাঙতে চেষ্টা করছে৷ পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে৷ তিনি জাতি উপজাতির সম্প্রীতিকে চোখের মণির মত করে রক্ষা করতে সকল অংশের মানুষকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য জাতি উপজাতি একতা৷ রাজ আমলে উপজাতি অংশের রাজারা যখন রাজ্য শাসন করেছেন তখনো অউপজাতি অংশের মানুষ তাদের মন্ত্রী বা উচ্চ রাজ কর্মচারী পদে কর্মরত ছিলেন, পরবর্তী সময়েও দেশ ভাগের পর অউপজাতি অংশের মানুষদের রাজ্যের উপজাতি অংশের মানুষরা বুকে টেনে নিয়েছেন৷ এটা ত্রিপুরার চিরাচরিত ঐতিহ্য৷ এই ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে এখন একটা অংশ ষড়যন্ত্র করছে৷ রাজ্য ভাগের ভুল স্লোগান ত্রিপুরার সর্বনাশ ডেকে আনবে৷ তিনি ভুল পথে চলা মানুষদের বুঝিয়ে সঠিক পথে আনার পরামর্শ দেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বর্তমান সরকারের নীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ত্রিপুরা সরকার যেখানে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা জারি রেখেছে, সেখানে দেশের বর্তমান সরকার গ্রামীণ অর্থনীতির উপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে৷ প্রসঙ্গক্রমে দেশের কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের মনোভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নীতির ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচেছ৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কৃষকরা আত্মহত্যা করছে৷ দেশে কৃষক আন্দোলন প্রসারিত হচ্ছে৷ তিনি বলেন, দেশের কয়েক কোটি গরীব কৃষকের ৭৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ মুকুবের দাবি কেন্দ্র মানতে রাজি হচ্ছেনা৷ অথচ ৪১ থেকে ৪২ জন বৃহৎ পূজিপতির ১১ থেকে ১২ লক্ষ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ পর্যায় ক্রমে ছাড় দেওয়া হচ্ছে৷ তিনি দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি ক্ষেত্রে সার, বীজ সহ বিভিন্ন সরকারী সহায়তার প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সরকার বলেন, দেশের ভুল নীতির ফলে দেশে মন্দা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ উৎপাদন কমছে৷ কমছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা৷ বর্তমান সরকার বছরে ২ কোটি বেকারের চাকুরীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বাস্তবে গত ৩ বছরে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী কাজ হারিয়েছে৷ ছোট ছোট শিল্প কারখানাগুলি সরকারের ভুল নীতির ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ যার ফলে মানুষ কাজ হারাচ্ছেন৷ রাজ্যের উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত বছর গুলিতে রেগায় ভাল সংখ্যায় কর্মসংস্থানের ফলে ত্রিপুরা পুরসৃকত হয়েছে৷ কিন্তু এই বছর অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ধনী ব্যক্তিদের সাহায্যার্থেই এমন করা হচ্ছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷ এর মধ্যেও ত্রিপুরা সরকার বিকল্পনীতি নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করছে৷ কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে যে বিষাক্ত হাওয়া সৃষ্টি করা হয়েছে ত্রিপুরাতেও সেই বিষেয় হাওয়া সৃষ্টিতে একটা অংশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচেছ৷ এই বিষয়ে সকল অংশের মানুষকে সতর্ক থাকতে তিনি আহ্বান জানান৷
অনুষ্ঠানে সমবায় দপ্তরের মন্ত্রী খগেন্দ্র জমাতিয়া প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টায় রাজ্যে সমবায় আন্দোলনের অগ্রগতি হচ্ছে৷ তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে আন্দোলনের ভূমিকা অন্যতম৷ এই ক্ষেত্রে মহিলাদের বেশি করে যুক্ত করার প্রচেষ্টা সরকারের জারি রয়েছে এবং সাফল্যও আসছে৷ আগামী দিনে সমবায় আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করতে রাজ্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন৷ অনুষ্ঠানে রাজ্য সভার সাংসদ ঝর্ণা দাস বৈদ্য বলেন, রাজ্য জাতি উপজাতি মানুষ ঐক্যবদ্ধ ভাবে সমবায় আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছে৷ এই ঐক্যকে ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হচ্ছে৷ এই চক্রান্তকেও ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিহত করতে তিনি আহ্বান জানান৷
অনুষ্ঠানে সমবায় ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নিতাই লাল বিশ্বাস, দপ্তরের তত্বাবধায়ক বাস্তুকার ক্ষুদিরাম ত্রিপুরাও বক্তব্য রাখেন৷ স্বাগত ভাষণ দেন ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান শ্রুতিনাথ সরকার৷ সভাপত্তিব করেন সমবায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ড ব্রজগোপাল রায়৷ উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন ত্রিপুরা সংসৃকতি সমন্বয় কেন্দ্রের বড়দোয়ালী শাখার শিল্পীগণ৷ পশ্চিম ত্রিপুরা, খোয়াই, সিপাহীজলা জেলায় সমবায় আন্দোলনের সাথে যুক্ত কর্মীগণ অনুষ্ঠানে সাক্ষী হতে উপস্থিত ছিলেন৷
2017-09-24