নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ সেপ্ঢেম্বর৷৷ এ যেন মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসন ব্যবস্থার অনুকরণে চলছে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্মকান্ড৷ রাজনৈতিক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা এবং এসএমএস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ প্রাথমিক ভাবে ২৪ ঘন্টার জন্য এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হলেও আগামী রবিবার পর্যন্ত এর সময়সীমা বাড়াল রাজ্য সরকার৷ ফলে এক টানা ৯৬ ঘন্টা ধরে মোবাইল ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা সারা রাজ্যে বন্ধ থাকবে৷ নেটিজেনরা তাতে ভিষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷ নেটিজেনদের বক্তব্য, বিভ্রান্তি ছড়ানো আটকাতে কেবল মাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিকেই বন্ধ করে দিলে উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হত৷
গত ২০ সেপ্ঢেম্বর রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতির কারণে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান সচিব রাকেশ সরোয়াল এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে সমস্ত টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন মোবাইলে এসএমএস এবং ইন্টারনেট পরিষেবা ২৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখতে হবে৷ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এসএমএস পরিষেবা, হোয়াটস্যাপ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেইসবুক, ট্যুইটার এবং ইউটিউবের মাধ্যমে সহজে বিভ্রান্তি ছড়ানো সম্ভব বলে উল্লেখ করেন৷ তাই ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ এক্ট ১৮৮৫ এবং টেলিকম সার্ভিস রুলস ২০১৭ মোতাবেক ঐ সমস্ত ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ জারি করেন৷ রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যেই এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে বলে তিনি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন৷ কিন্তু, ২৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর গতকাল ফের এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে সময়সীমা বাড়ানো হয়৷ এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হলে জনৈক আধিকারিক এই সময়সীমা আগামী রবিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন৷ সূত্রের খবর, আগামীকাল এবিষয়ে স্বরাষ্ট্রদপ্তর পর্যালোচনা করবে৷
এখন প্রশ্ণ উঠেছে, বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা কতখানি রয়েছে৷ আইটি বিশেষজ্ঞদের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে জানা গেছে, মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া রাজ্য সরকারের অপরিপক্কতার প্রমাণ দিয়েছে৷ আইটি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট আইপি(ইন্ট্রিগ্রেটেড প্রোটোকল) এড্রেস রয়েছে৷ এই আইপি এড্রেস দিয়েই ওয়েবসাইটকে চিহ্ণিত করা হয়৷ ফেইসবুক, ট্যুইটার কিংবা ইউটিউবের আইপি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা ব্লক লিস্টে যুক্ত করে দিলেই ঐ ওয়েবসাইটগুলি ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে যাবে৷ সারাদেশে জাতির স্বার্থে ভারত সরকার বহু ওয়েবসাইট ব্লক করে রেখেছে৷ চিনে ফেইসবুক নিষিদ্ধ করা আছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই সাময়িক কিছু সময়ের জন্য যোগাযোগ মাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো বন্ধ করার জন্য ঐ নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটগুলিকেই ব্লক করে দিলে উদ্দেশ্য সাধিত হত৷ তা না করে সম্পূর্ণ মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে বর্হিবিশ্বের সাথে নেটিজেনদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ বিএসএনএল’র ত্রিপুরা শাখার জনৈক আইটি আধিকারিকের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে জানা গেছে, রাজ্য সরকার যদি নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইট কিংবা যোগাযোগ মাধ্যম ব্লক করে দেওয়ার নির্দেশ দিত তাহলে সেটাও সম্ভব ছিল৷ তাই, উদ্ভুত এই সমস্যার সমাধান কবে নাগাদ হবে সেই অপেক্ষায় রয়েছেন নেটিজেনরা৷
2017-09-23