নিজেকে সুস্থ রাখতে চাই সচেতনতা ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনশৈলী: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৩১ ডিসেম্বর: ত্রিপুরাকে একটি সুস্থ, সচেতন ও কল্যাণকামী রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য দপ্তর কাজ করে চলেছে। রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের জন্য সুলভ, গুণগত ও সময়োপযোগী স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই ‘মুখ্যমন্ত্রী নিরাময় আরোগ্য অভিযান’ শুরু করা হয়েছে। এই অভিযান রাজ্য সরকারের একটি সুদূরপ্রসারী ও দৃঢ় পদক্ষেপ। আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যস্তরীয় ‘মুখ্যমন্ত্রী নিরাময় আরোগ্য অভিযান’ এর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর এবং ত্রিপুরা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের উদ্যোগে ‘মুখ্যমন্ত্রী নিরাময় আরোগ্য অভিযান’ এর সূচনা করা হয়। পাশাপাশি যক্ষ্মা সম্পর্কিত এআই ভিত্তিক পাইলট প্রশিক্ষণ মডিউলও চালু করা হয়।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের জন্য আজ এক উল্লেখযোগ্য দিন। স্বাস্থ্য দপ্তরের কাজের সাথে একটি নতুন পালকের সংযোজন হল। অসংক্রামিত রোগ সারা পৃথিবীতে এখন একটি আলোচ্য বিষয়। ভারতে বর্তমানে প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ অসংক্রামিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দেরিতে সনাক্ত হলে এই সমস্ত রোগে বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এই কারণেই রোগের সনাক্তকরণ অপরিহার্য। লক্ষ্য করা গেছে বর্তমানে ৩০ বছরের উর্ধে মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার ইত্যাদি অসংক্রামিত রোগ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব রোগ প্রারম্ভিক ক্ষেত্রে ধরা পরে না এবং পরবর্তীতে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা, রোগ চিহ্নিতকরণ এবং চিকিৎসার আওতায় এনে নিরাময়ের উদ্দেশ্যে এই প্রতিরোধমূলক ও জনমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি সুস্থ মানুষই সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়তা করতে পারে। নিজেকে সুস্থ রাখতে চাই সচেতনতা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনশৈলী। রাজ্যের বর্তমান সরকারও নাগরিকদের সময়োপযোগী স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন নতুন স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য গত বছর ৬ লক্ষ ৮০ হাজার ব্যক্তিকে স্ক্রিনিং করা হয়েছিল। এরমধ্যে ২৫ হাজার ২৫৯ জনের ডায়াবেটিস এবং ৪৯ হাজার ১৫৩ জনের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য উঠে আসে। ৫ লক্ষ ২৮ হাজার মহিলাকে স্তন ক্যান্সার এবং ১ লক্ষ মহিলাকে জরায়ু ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিং করা হয়েছিল। যাদের রোগ সনাক্তকরণ হয়েছে তাদের চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে এবং নিয়মিত ফলো-আপে রাখা হয়েছে। এই জরুরী প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করেই একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এবং মিশন মোডে এই অভিযান কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে অসংক্রামিত রোগের স্ক্রিনিং, চিকিৎসা এবং নিয়মিত ফলো-আপ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

এই অভিযানটি মূলত মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব, সুস্থ কৈশোর অভিযানের কৌশলের উপর ভিত্তি করেই প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিবছর দুই পর্যায়ে পরিচালিত হবে এই অভিযান। প্রতিটি পর্যায়ের মেয়াদ হবে ১৪ দিন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ আই হলো বর্তমান বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ। একে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে মানব সভ্যতার জন্য উজ্জ্বল দিন নিয়ে আসবে। আজকের দিনে যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কিত এআই ভিত্তিক পাইলট প্রশিক্ষণ মডিউলের সূচনা রাজ্যের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন আধুনিক চিকিৎসার প্রতিফলন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানব কল্যাণের কথা বলে আসছেন। সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে পাথেয় করে রাজোর বর্তমান সরকারও নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে চলছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই সব কর্মসূচিকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দপ্তরের সমস্ত স্তরের কর্মীকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। এতেই এই অভিযানের সার্থকতা আসবে। এই কর্মসূচি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর সম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন, সুস্থ নারী সশক্ত পরিবার অভিযান, মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব ও সুস্থ কৈশোর অভিযান, রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কর্মসূচি, স্টপ ডায়রিয়া ক্যাম্পেইন, স্কুল হেলথ মিশন ইত্যাদি কর্মসূচি এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভিন্ন সফলতার চিত্র তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী আজকের এই অভিযানকে মিশন মোডে সম্পাদনের আহ্বান জানান এবং সার্বিক সফলতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে প্রতিবছর কোটি কোটি মানুষ অসংক্রামিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে রাজ্যে এই অভিযানের গুরুত্ব রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার নাগরিকদের আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করার লক্ষ্যে এবং মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগে এই অভিযান শুরু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা সাজু ওয়াহিদ এ ‘মুখ্যমন্ত্রী নিরাময় আরোগ্য অভিযান’ এর বিষয়ে তথ্যভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করেন। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন ডা. নুপুর দেবর্বমা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. দেবশ্রী দেববর্মা, রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডা. অঞ্জন দাস, মেডিক্যাল এডুকেশন দপ্তরের অধিকর্তা ডা. এইচ. পি. শর্মা।

Leave a Reply