নাসিক–সোলাপুর ছয় লেন এক্সপ্রেসওয়ে-সহ দুই জাতীয় সড়ক প্রকল্পে অনুমোদন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার

নয়াদিল্লি, ৩১ ডিসেম্বর : বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মোট ২০,৬৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুইটি জাতীয় সড়ক প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হল নাসিক–সোলাপুরের মধ্যে নির্মিত হতে চলা ছয় লেনের, সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস-নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ে, যা বিল্ড–অপারেট–ট্রান্সফার (বিওটি) মডেলে বাস্তবায়িত হবে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, “এই করিডরটি ‘বিকশিত ভারত গোল্ডেন কোয়াড্রিল্যাটারাল’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষ করে মুম্বই ও চেন্নাইকে সংযুক্তকারী রুটের ক্ষেত্রে। ১৯,১৪২ কোটি টাকা বিনিয়োগে এই প্রকল্পটি আহিল্যা নগর ও ধারাশিব-সহ একাধিক শিল্পকেন্দ্রকে যুক্ত করবে এবং আগামী দুই বছরের মধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার কথা।”

এই এক্সপ্রেসওয়েতে থাকছে ২৭টি বড় সেতু, ১৬৪টি ছোট সেতু এবং ৫.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি এলিভেটেড ভায়াডাক্ট। ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতির জন্য নকশা করা এই সড়ক যাতায়াত দূরত্ব প্রায় ১৪ শতাংশ কমাবে এবং চেন্নাই থেকে সুরত যাত্রার সময় প্রায় ৪৫ শতাংশ হ্রাস করবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, এই করিডর রেলস্টেশন, বিমানবন্দর এবং গতি শক্তি অর্থনৈতিক নোডগুলির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করবে।

নাসিক–সোলাপুর করিডরটি মহারাষ্ট্রের এই দুই শিল্পনগরীর মধ্যে যাতায়াতের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে, লজিস্টিক্স ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করবে এবং রাজ্যের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ জোরদার করবে। প্রকল্পটির ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ ও পরিবেশগত ছাড়পত্রের কাজ অনেকটাই আগেভাগে সম্পন্ন করা হবে, যাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন আরও নিশ্চিত ও পূর্বানুমেয় হয়। অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, এই পরিবর্তনের ফলে প্রকল্পগুলি আরও ‘ব্যাঙ্কেবল’ হয়ে উঠবে।

মন্ত্রিসভা যে দ্বিতীয় প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে, সেটি হল ওড়িশার জাতীয় সড়ক ৩২৬-এর প্রশস্তকরণ। ১,৫২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের লক্ষ্য আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা। এই সড়ক উন্নয়নের ফলে খনিজ-সমৃদ্ধ কিন্তু পরিকাঠামোগতভাবে পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের পাশাপাশি বিশেষ ধরনের কফি চাষের মতো নতুন খাতও এর মাধ্যমে বাজারে সহজে পৌঁছনোর সুযোগ পাবে।

অশ্বিনী বৈষ্ণব আরও বলেন, বর্তমান পরিকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ শুধু সড়ক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। রেল, বিমানবন্দর ও বন্দর ক্ষেত্রেও একযোগে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যাতে সমন্বিত লজিস্টিক্স কৌশলের মাধ্যমে পরিবহণ ব্যয় কমানো যায় এবং সরবরাহ শৃঙ্খল আরও কার্যকর হয়।

তিনি জানান, এই ধারাবাহিক পরিকাঠামো বিনিয়োগের ফলে মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে—যাতায়াত সহজ হবে, সময় সাশ্রয় হবে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংযোগ আরও দৃঢ় হবে। বৈষ্ণবের কথায়, ২০২৪ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত মন্ত্রিসভা মোট ১২.৪৩ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪৩টি রেল প্রকল্প, ২৪টি জাতীয় সড়ক প্রকল্প, ৮টি মেট্রো প্রকল্প, পাশাপাশি বন্দর, শিল্পনগরী ও গণআবাসনের মতো একাধিক বৃহৎ মূলধনী উদ্যোগ।

Leave a Reply