আগরতলা, ২৬ ডিসেম্বর: প্রয়াত হলেন ধর্মনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা ত্রিপুরা বিধানসভা অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন। তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ, মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা সহ অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য, গত ৮ আগস্ট হঠাৎই তিনি আগরতলা থেকে ধর্মনগর যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে তাকে বহি:রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। বেঙ্গালুরুর অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছিল।
তবে শেষ রক্ষা হলো না। চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। ২৬ ডিসেম্বর রাত ৩ টা ৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আগামীকাল তাঁর মৃতদেহ আগরতলায় নিয়ে আসা হবে।
তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সর্বত্র। প্রধানমন্ত্রী, গৃহমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, সর্বভারতীয় বিজেপি কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা। এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী রতন লাল নাথ, মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, বিধায়ক দীপক মজুমদার সহ অন্যান্যরা। শোক প্রকাশ করেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী।
তাঁর প্রয়াণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের প্রয়াণের খবরে আমি বেদনাহত। বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে ত্রিপুরার উন্নয়নের লক্ষ্যে তাঁর প্রয়াসের জন্যে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এই দুঃখের সময়ে তাঁর পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল। ওঁ শান্তি।”
গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “ত্রিপুরা বিধানসভার স্পিকার বিশ্ববন্ধু সেন জির মৃত্যুতে গভীর শোকাহত। একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা যিনি তাঁর জীবনের বেশ কয়েক বছর জনসেবায় উৎসর্গ করেছিলেন, সেন জির মৃত্যু রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা। ওম শান্তি শান্তি শান্তি।”
তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা বলেন, ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর এই অকালপ্রয়াণ রাজ্যবাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
আমি তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও অনুগামীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তিনি আরও বলেন, পরমকরুণাময় ঈশ্বরের নিকট বিদেহী আত্মার সদ্গতি কামনা করি এবং প্রার্থনা করি তাঁর পরিবার যেনো এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে পারেন।
২০০৮ সালে ধর্মনগর বিধানসভা থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেখানে তিনি জয়লাভ করে প্রথম বিধায়ক নির্বাচিত হন। তারপর ২০১৩ সালেও ফের কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েই তিনি একই বিধানসভা থেকে জয়লাভ করেন। ২০১৭ সালে বিজেপিতে যোগদান করেন ও ২০১৮ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। ২০২৩ এর বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ত্রিপুরা বিধানসভার ১১তম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন।
থিয়েটার ও যাত্রাশিল্পীতেও রুচি রাখতেন বলে জানিয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনে বিশ্ববন্ধু সেনের পথচলা ছিল দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য এবং সংসদীয় রীতিনীতি ও শালীনতার প্রশ্নে তিনি সর্বদা ছিলেন দৃঢ় ও নিষ্ঠাবান। তাঁর প্রয়াণে রাজ্য এক অভিজ্ঞ ও জননন্দিত জনপ্রতিনিধিকে হারাল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
বিশ্ববন্ধু সেনের মৃত্যুতে রাজ্যজুড়ে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে।

