আগরতলা, ৪ নভেম্বর : চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালে আট (৮) বছর বয়সী এক শিশুকন্যা সংকটাপন্ন পরিস্থিতি থেকে এখন ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকে এগোচ্ছে। উত্তর জেলার দশদা কাঞ্চনপুর এলাকার বাসিন্দা এই শিশুটি সাত দিনের জ্বর, সঙ্গে খিচুনী সহ স্নায়াবিক বিকারগত অবস্থায় চলে যায়। এই সমস্ত জটিলতা সহ একাধিক উপসর্গ নিয়ে শিশুটিকে গত ১৭ জুন ২০২৫ আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট এর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। জিবিপি হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ প্রাথমিকভাবে শিশুটিকে অ্যাকিউট এনসেফালাইটিস
সিনড্রোম হিসেবে ডায়াগনোসিস করে। এরপর পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ প্রথমে অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য সহায়ক ওষুধের মাধ্যমে শিশুটির চিকিৎসা করেন। তবে, শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ইনভেসিভমেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিশেষ করে সিএসএফ পরীক্ষা করে, জাপানিজ এনসেফালাইটিস সংক্রমণজনিত একটি রোগ চিহ্নিত করা হয়, যা সাধারণত একটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং এই রোগে উচ্চ মৃত্যুহারের সম্ভাবনা থাকে। এইভাবে ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন ওই শিশুটি টেনশন স্নিউমোথোরাক্স (Tension Pneumothorax) এ আক্রান্ত হয় এবং তাকে ইন্টারকস্টাল চেস্ট টিউব দেওয়া হয়। এই চিকিৎসার পরেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ তাকে ১৪দিনের ট্রাকিওস্টোমি করেন এবং ট্রাকিওস্টোমি টিউব দিয়ে দীর্ঘকালীন ভেন্টিলেশন শুরু হয়। এভাবে শিশুটি টানা ৬০ দিন ধরে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে ছিল, যা আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-এ একজন শিশুর জন্য সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ভেন্টিলেশন ছিল। ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে এবং তাকে অন্তবর্তী অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া হয়, যা ধীরে ধীরে বন্ধ করা হয়। এরপর, ট্রাকিওস্টোমি টিউবের মাধ্যমে শ্বাস নেওয়া শুরু হয়। এদিকে তখন শিশুটিকে ব্যয়বহুল ওষুধ প্রদান করা হয়। ইনট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (IVIG), সহ অন্যান্য ওষুধের মাধ্যমে শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয় এবং নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করানো হয়। আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ শংকর চক্রবর্তী এবং ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ কনক চৌধুরীর সহায়তায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছিল। প্রফেসর (ডাঃ) সঞ্জীব কুমার দেববর্মা, ডাঃ শ্রীবাস দাস, ডাঃ রিপন দেববর্মা, ডাঃ চয়ন সরকার ডাঃ মৃন্ময় দাস, ডাঃ অমিতাভবৈদ্য শিশুটির চিকিৎসা করছেন।
আজ (৪ নভেম্বর, ২০২৫) ওই শিশুটি অনেকটা সুস্থ, এখন সে মুখে ওষুধ এবং ফিডিং নিয়ে জীবনযাপন করছে, তবে তার বাকী কিছু স্নায়ু ক্ষতি এবং জয়েন্ট কনট্রাকচার রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হওয়ার আশা করা হচ্ছে। আজ তার জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের শিশু বিভাগে। মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ শংকর চক্রবর্তী এবং ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ কনক চৌধুরীসহ চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা শিশুটিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। এই কেসটি উপস্থাপনের মাধ্যমে আমরা সকলকে সময়ে চিকিৎসা নেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে চাই। শিশুটির আরোগ্যের এই ঘটনায় প্রমাণিত যে, যত দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া যায়, ততই রোগের উপসর্গগুলি আরও খারাপ হওয়ার প্রমাণিত আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এ উপলক্ষে জিবিপি হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্টে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর (ডাঃ) সঞ্জীব কুমার দেববর্মা এই শিশুটির চিকিৎসা পরিষেবার সমস্ত তথ্য ও সর্বোপরি আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের মানবিক মুখ তুল ধরেন। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এই সংবাদ জানানো হয়েছে।

