ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, সব ফ্লাইট স্থগিত

লতিফুর রহমান, ঢাকা, ১৮ অক্টোবর: ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) কার্গো টার্মিনালে শনিবার বিকেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিমান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। একাধিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়।
দমকল বিভাগ জানায়, বিকেল ২টা ১৫ মিনিটের দিকে কার্গো ভিলেজ এলাকায় আগুন লাগে, যেখানে আমদানি করা পণ্য মজুত থাকে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকলের ৩৬টি ইউনিটসহ বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর দুটি প্লাটুন অংশ নেয়।

দমকল কর্তা তলহা বিন জাসিম বলেন, ‘আগুনের তীব্রতা অনেক বেশি। প্রথমে ১৬টি ইউনিট কাজ শুরু করে, পরে আরও ১৬টি ইউনিট যোগ দেয়।’ বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাকিব সামাদ এক অডিও বার্তায় বলেন, ‘আমাদের দমকল ও বিমান বাহিনী কাজ করছে। দয়া করে বারবার ফোন করে তাদের মনোযোগ বিভ্রান্ত করবেন না।’
বিকেল ৫টার মধ্যে আগুন আংশিক নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান বিমানবন্দরের মুখপাত্র ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ। তবে কার্গো ভিলেজ থেকে তখনও ঘন ধোঁয়া উঠতে থাকে।
কমপক্ষে পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট— দুটি বাংলাদেশ বিমানের৷ দুটি ইউএস-বাংলা এবং একটি ইন্ডিগো—বিকল্প গন্তব্যে পাঠানো হয়। বিমানের একটি রিয়াদ-ঢাকা ফ্লাইট ৩৯৬ যাত্রীসহ সিলেটে নামানো হয়। ইন্ডিগো দিল্লি-ঢাকা ফ্লাইটটি কলকাতায় অবতরণ করে। বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র জানান, ‘আমাদের সব বিমান নিরাপদে অবতরণ করেছে। পরিস্থিতির আপডেট সময়মতো জানানো হবে।’ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) জানায়, ‘সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগুন বেশিরভাগটাই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’

আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, রাসায়নিক মজুত থাকা একটি অংশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়।
গত চার দিনের মধ্যে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বড় অগ্নিকাণ্ড। এর আগে রাজধানীর মিরপুর এবং চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) দুটি বড় আগুনের ঘটনা ঘটে।
এদিকে, রোমে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি-র বৈঠকে ইতালি বাংলাদেশকে অগ্নি তদন্ত ও প্রতিরোধ বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি মানবপাচার, অর্থপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন দমনেও সহযোগিতার অঙ্গীকার জানায়। দুই দেশ গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় জোরদার, মানবপাচারবিরোধী যৌথ টাস্কফোর্স গঠন এবং আর্থিক অপরাধ মোকাবিলায় এমএলএটি ও প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে একমত হয়।
বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে ২৫ নিরাপত্তা কর্মী আহত: বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির ২৫ সদস্য আহত হয়েছেন বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আগুন নেভানোর সময়।

আনসার (উত্তর অঞ্চল)-এর কমান্ডার মোহাম্মদ গোলাম মাওলা তুহিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২৫ জন সদস্য ডিউটিরত অবস্থায় আহত হয়েছেন। তাঁদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, সদস্যরা আগুনের প্রাথমিক অবস্থায় তা টের পেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানান এবং ঝুঁকি সত্ত্বেও আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। আনসার ও ভিডিপি-র উপপরিচালক মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান জানান, প্রায় ১,০০০ আনসার সদস্য উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপণ অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে আটজনকে আনা হয়েছে। কারও দেহে দগ্ধের চিহ্ন নেই। অতিরিক্ত তাপ ও ধাক্কাধাক্কিতে সামান্য আঘাত পেয়েছেন, সবাই স্থিতিশীল আছেন।’ সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও অভিযানে অংশ নেন। আনসার ও ভিডিপি কর্তৃপক্ষ আহতদের চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে রেখেছে।