কলকাতা, ২৩ সেপ্টেম্বর: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় গতকাল সোমবার রাতভর চলমান ভারী বৃষ্টির কারণে শহরজুড়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় জনজীবনে ভরপুর বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এই বৃষ্টিপাত ও সংশ্লিষ্ট কারণে কমপক্ষে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা প্রধানত কলকাতার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের বেনিয়াপুকুর, কালিকাপুর, নেতাজী নগর, গড়িয়াহাট ও ইকবালপুর এলাকার বাসিন্দা।
সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত থেকেই শুরু হওয়া বৃষ্টি মঙ্গলবার ভোরের দিকে তীব্রতর হয়। মাত্র এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়, কিছু কিছু এলাকায় তিন ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটারও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। দুর্গাপূজার কিছু দিন আগে এই ভারী বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা শহরের মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানায়, দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে লাল সতর্কতা জারি রয়েছে। গত তিন ঘণ্টায় কলকাতা সহ অনেক এলাকায় বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়াও বইছে। পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সহ অন্য জেলা গুলোতেও হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
কলকাতা পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, গড়িয়া কামদাহারিতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া, জোধপুর পার্কে ২৮৫ মিলিমিটার, কালীঘাটে ২৮০ মিলিমিটার, টপসিয়ায় ২৭৫ মিলিমিটার ও বালিগঞ্জে ২৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এই ভারী বৃষ্টির ফলে শহরের যানবাহনের চলাচল মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তার জল গাড়ির ইঞ্জিনে ঢুকে পড়ায় অনেক গাড়ি বন্ধ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন স্থানে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়।
সবচেয়ে জটিল অবস্থা দেখা দিয়েছে মেট্রো রেল পরিষেবায়। মহানায়ক উত্তমকুমার ও রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশে জল জমে যাওয়ায় মেট্রো পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। শহীদ খুদিরাম থেকে ময়দান পর্যন্ত মেট্রো চলাচল বন্ধ রয়েছে। মেট্রোর মুখপাত্র জানিয়েছেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, এজন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৬০ বছর বয়সী জিতেন্দ্র সিং, বেনিয়াপুকুরের ফিরোজ আলি খান, নেতাজীনগরের প্রাণতোষ কুণ্ডু ও একবালপুরের মুমতাজ বিবি রয়েছেন। কলকাতা পুরসভার মেয়র ও রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, এখনও পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হয়েছে এবং শহরের অধিকাংশ জায়গায় জল জমে রয়েছে। পুরসভার কর্মীরা রাতভর জল সরানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপের কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশাসন শহরবাসীকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে পুরসভা ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে।

