সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক উৎসব, অংশ নিচ্ছেন জুবিন গার্গ, মেবা ওফিলিয়া ও বরকুং হ্রাংখাওল

সিঙ্গাপুর | ২০ সেপ্টেম্বর : উত্তর-পূর্ব ভারতের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি ব্যতিক্রমধর্মী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে সংগীত, নৃত্য ও শিল্পের মাধ্যমে অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। এই আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশ নিচ্ছেন অসমের প্রখ্যাত গায়ক জুবিন গার্গ, মেঘালয়ের জনপ্রিয় র‍্যাপার মেবা ওফিলিয়া, এবং ত্রিপুরার সমাজসচেতন সংগীতশিল্পী বরকুং হ্রাংখাওল। বহু দশক ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতে এক অনন্য সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য গড়ে উঠলেও তা মূলত স্থানীয় পরিসরেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠান সেই সীমাবদ্ধতা ভেঙে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে অঞ্চলটির সৃজনশীলতা ও সাংস্কৃতিক শক্তি।

অনুষ্ঠানে জুবিন গার্গ তাঁর জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি লোকসংগীত পরিবেশন করবেন, যা ভারতীয় প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক দর্শকদের সঙ্গে সহজেই সংযোগ তৈরি করবে। মেবা ওফিলিয়া তাঁর শক্তিশালী র‍্যাপ ও নারীর ক্ষমতায়নের বার্তা নিয়ে মঞ্চে উঠবেন, আর বরকুং হ্রাংখাওল তুলে ধরবেন তাঁর সংগীতে সামাজিক বার্তা ও আদিবাসী ঐতিহ্যের মিশ্রণ। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু বিনোদন নয়, বরং সাংস্কৃতিক কূটনীতি মজবুত করার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্রকে সামনে রেখে এই অনুষ্ঠান দুই অঞ্চলের মধ্যে নতুন সেতুবন্ধন তৈরি করবে।

সরকারি স্তরেও উত্তর-পূর্ব ভারতকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছরে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ভারতীয় সংস্কৃতির পরিচিতি বাড়াতে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক উৎসব এবং প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিতব্য এই অনুষ্ঠান আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে থাকবে নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং মণিপুরের লোকনৃত্য, বিভিন্ন রাজ্যের কারুশিল্পের প্রদর্শনী, যা অঞ্চলটির শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে। এটির মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতকে একটি একক সত্তা হিসেবে নয়, বরং বহু ভাষা, সংস্কৃতি ও ধরণের এক সমৃদ্ধ মিশ্রণ হিসেবে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করা হবে।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগ স্থানীয় শিল্পীদের জন্য শুধু স্বীকৃতি নয়, বরং নেটওয়ার্কিং ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সম্ভাবনাও তৈরি করে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বহু শিল্পী এখনও পর্যন্ত বিশ্বে তাদের প্রতিভা তুলে ধরার পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি। এই রকম উদ্যোগ তাঁদের সেই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে, এই ধরনের অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করে, যার ফলে ওই অঞ্চলের পর্যটন ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এছাড়া, এই ধরনের অনুষ্ঠান ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক সুনিপুণ মেলবন্ধন ঘটায়। জুবিন গার্গ যেমন লোকসংগীতকে আধুনিক সুরে উপস্থাপন করেন, তেমনি মেবা ও বরকুং তাঁদের র‍্যাপ ও হিপ-হপের মধ্যেও স্থানীয় ভাবধারা ও উপাদান সংযুক্ত করেন। এতে করে তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দর্শকরাও সহজে আকৃষ্ট হন।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিল্পীরা এই সুযোগকে তাঁদের নিজ ভূমির প্রতিনিধিত্ব করার এক গর্বের মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন। জুবিন গার্গ জানান, বিদেশে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা সবসময়ই বিশেষ, কারণ এটি তাঁকে তাঁর প্রবাসী ভক্তদের সঙ্গে সংযুক্ত করে। মেবা ওফিলিয়া বলেন, তাঁর সংগীতের মাধ্যমে তিনি বিশ্বদর্শকদের অনুপ্রাণিত করতে চান, বিশেষ করে তরুণী শিল্পীদের। বরকুং হ্রাংখাওল বলেন, এই প্ল্যাটফর্ম শান্তি, ঐক্য ও সাংস্কৃতিক গর্বের বার্তা ছড়িয়ে দিতে একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

সংগঠকরা ভবিষ্যতে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও জাপানের মতো দেশে আরও অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন। এর মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক সার্কিট তৈরি হবে, যেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের শিল্পীরা নিয়মিত পারফর্ম করতে পারবেন।

সার্বিকভাবে, সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিতব্য এই অনুষ্ঠান উত্তর-পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক জগতের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি শিল্পীদের জন্য যেমন গর্বের বিষয়, তেমনি বিশ্বদর্শকদের জন্য এক বিরল অভিজ্ঞতা — উত্তর-পূর্ব ভারতের হৃদস্পন্দন অনুভব করার সুযোগ। এটি সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার দ্বার খুলে দিচ্ছে।