‘আমরা অংশীদার চাই, উপদেশদাতা নয়’: ইউরোপকে নিশানা করে বৈশ্বিক পরিবর্তন নিয়ে বললেন এস. জয়শঙ্কর

নয়াদিল্লি, ৪ মে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর রবিবার (৪ মে) ইউরোপকে উদ্দেশ করে কড়া বার্তা দিয়ে বলেছেন, ইউরোপ এখনও উদীয়মান বহু-মেরু বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে লড়াই করছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ভারত অংশীদারিত্বের খোঁজে আছে, উপদেশদাতাদের নয়—বিশেষ করে এমন উপদেশদাতারা, যারা নিজের দেশে যা করে না, বাইরের দেশগুলোকে তা করতে বলে।

আর্কটিক সার্কেল ইন্ডিয়া ফোরাম ২০২৫-এ বক্তৃতা প্রদানকালে জয়শঙ্কর বলেন,”যখন আমরা বিশ্বকে দেখি, আমরা অংশীদার খুঁজি, উপদেশদাতা নয়। বিশেষ করে এমন কেউ, যারা নিজের দেশে যা করে না, বাইরের দেশে তা করতে বলে। ইউরোপের একটি অংশ এখনও এই সমস্যার মধ্যে আটকে আছে। ইউরোপ এখন বাস্তবতা যাচাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে। তারা এই চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে পারবে কি না, তা সময়ই বলবে।”

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব এখন আরও প্রতিযোগিতামূলক ও জটিল হয়ে উঠেছে এবং এই বাস্তবতাকে বুঝে তবেই আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।

জয়শঙ্কর জানান, বর্তমান সময়ে আমেরিকা আগের তুলনায় অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। অপরদিকে ইউরোপ পরিবর্তনের চাপের মুখোমুখি। “বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া বড় কোনো ঘটনা আমাদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। ইউরোপের ওপর বহু-মেরুত্বের বাস্তবতা চেপে বসেছে, তবে তারা তা পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি,” বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত গত ৪০ বছর ধরে অ্যান্টার্কটিকায় সক্রিয় এবং কিছু বছর আগে একটি নির্দিষ্ট আর্কটিক নীতি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের অ্যান্টার্কটিকায় উপস্থিতি চার দশকের বেশি। আমরা আর্কটিক নীতি তৈরি করেছি এবং স্বালবার্ডে কেএসএটি-এর সঙ্গে মহাকাশ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছি। বিশ্বের সবচেয়ে যুব জনসংখ্যার দেশ হিসেবে আর্কটিক অঞ্চলে যা কিছু ঘটছে, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

জয়শঙ্কর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর্কটিকে নতুন শিপিং রুট তৈরি হচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। “গ্লোবাল ওয়ার্মিং নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। প্রযুক্তি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে আর্কটিকের গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। “আর্কটিকের ভবিষ্যৎ মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ আলোচনার ওপর নির্ভর করছে,” মন্তব্য করেন তিনি।

ফোরামের চেয়ারম্যান ও আইসল্যান্ডের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ওলাফুর রাগনার গ্রিমসন জানান, ভারতের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি আর্কটিক অঞ্চলের সম্পদের ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। তিনি ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের এই অঞ্চলে আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।