‘প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছাতে হবে আইনি সহায়তা, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও’, মণিপুরে বলেছেন সুপ্ৰিম কোৰ্টের জাস্টিস গাভাই

চূড়াচাঁদপুর (মণিপুর), ২২ মাৰ্চ (হি.স.) : ‘প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছাতে হবে আইনি সহায়তা, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও’, মণিপুরে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন সুপ্ৰিম কোৰ্টের জাস্টিস ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই।

ন্যায়বিচার, স্বাস্থ্যসেবা এবং আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের জাস্টিস ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই আজ শনিবার মণিপুরে একটি আইনি পরিষেবা শিবির, স্বাস্থ্য শিবির এবং আইনি সহায়তা ক্লিনিকের উদ্বোধন করেছেন। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক উদ্দেশ্যগুলির ওপর জোর দিয়ে জাস্টিস বিআর গাভাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায়বিচার দ্রুত এবং সাশ্রয়ী মূল্যে সকল নাগরিকের কাছে পৌঁছাতে হবে।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইনি ও স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে জাস্টিস ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই বারবার বলেন, ‘কোনও সম্প্রদায়, জনগোষ্ঠী যাতে পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, একটি ন্যায়সংগত সমাজের জন্য ন্যায়বিচার, স্বাস্থ্যসেবা এবং মনুষের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের ক্ষমতায়নকারী সুযোগগুলির অ্যাক্সেসযোগ্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো ‘অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের’ (ইনটার্নেলি ডিসপ্লেসড পার্সন, সংক্ষেপে আইডিপি) সহায়তা প্রদান করা, যাঁরা সমাজের একটি দুর্বল অংশ, যাঁরা প্রায়শই পরিচয় হারানো, সম্পত্তির অধিকার এবং ক্ষতিপূরণ দাবির সাথে লড়াই করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘জাতীয় আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ’ (ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি, সক্ষেপে এনএএলএসএ)-এর অধীনে বাস্তুচ্যুত মানুষজনদের ন্যায্য অধিকার পেতে সহায়তা করতে বেশ কয়েকটি নতুন ব্যবস্থা ঘোষণা করেছেন।

প্রসঙ্গত, আইনি সহায়তার সহজলভ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘মণিপুর রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ’ (মণিপুর স্টেট লিগ্যাল অথরিটি, সংক্ষেপে এমএএসএলএ) রাজ্য জুড়ে ২৬৫টি আইনি সহায়তা ক্লিনিক স্থাপন করেছে। বাস্তুচ্যুত সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্লিনিক স্থাপনের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে, যেখানে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে। বাস্তুচ্যুত মানুষজনদের এই পরিষেবাগুলির সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে পুনর্বাসনের জন্য তাঁদের অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বিচারপতি বিআর গাভাই।

জাস্টিস ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই বলেন, ‘এই উদ্যোগ ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন। আইনি সহায়তা ক্লিনিকগুলি এই ব্যবধান পূরণ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, আজ শনিবার সকালে বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারকের দল সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত মণিপুর এসেছেন। পাঁচ সদস্যের বিচারক-দলে জাস্টিস বিআর গাভাই ছাড়া রয়েছেন জাস্টিস যথাক্রমে সূর্য কান্ত, বিক্রম নাথ, এমএম সুন্দরেশ এবং নংমেইকাপাম কোটিশ্বর সিং। তাঁদের মধ্যে কোটিশ্বর সিং ছাড়া পাঁচ বিচারক চূড়াচাঁদপুর জেলায় সদ্ভাবনা মণ্ডপের ত্রাণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। এখানে বাস্তুচ্যুত পরিবারবর্গের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ মতবিনিময় করেছেন বিচারকরা।

গোষ্ঠী সংঘর্ষের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সংবলিত কাহিনি শুনে বিচারকরা আশ্বাস দিয়েছেন, ‘শীঘ্রই শান্তি ফিরবে মণিপুরে, আপনারা নিজেদের বাড়িঘরে যেতে পারবেন। আমরা জানি, আপনারা সকলে এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে দিনপাত করছেন। তবে সকলের সহায়তায় এই কঠিন সময় অল্পদিনের মধ্যেই শেষ হবে।’

বিচারপতি বিআর গাভাই আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘সংবিধানের ওপর আস্থা রাখুন। আমাদের সংবিধান নিশ্চিত করবে, রাজ্যে একদিন পুরোপুরি শান্তি ফিরে আসবে। একদিন আমরা উদ্ভত সংকট কাটিয়ে উঠব।’

এদিকে সরকারি এক সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবীদের এক সংগঠন ‘অল মণিপুর বার অ্যাসোসিয়েশন’ (এএমবিএ)-এর চূড়াচাঁদপুর জেলা কমিটির আপত্তির দরুন কুকি-জো অধ্যুষিত চূড়াচাঁদপুর জেলায় যাননি প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য এবং মেইতেই জনগোষ্ঠীর সদস্য বিচারপতি নংমেইকাপাম কোটিশ্বর সিং। তিনি বিষ্ণুপুর জেলায় যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *