নানা সমস্যায় জর্জরিত চিটাগাং বস্তির পান চাষীরা

বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য

আগরতলা, ৫ মার্চ : পান চাষের জন্য চিটাগাং বস্তি একটি উজ্জ্বল নাম। রাজধানী আগরতলা শহর বা আসামের শিলচর শহরের পান রসিকদে রসনা মিটাচ্ছে চিটাগাং বস্তির উৎপন্ন পান। বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত চিটাগাং বস্তির পান চাষীরা।

প্রসঙ্গত, ঊনকোটি জেলার কুমারঘাট মহকুমার সুকান্তনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি এলাকার নাম চিটাগাংবস্তি। এক সময়ে বাংলাদেশের চিটাগাং থেকে কয়েক হাজার চিটাগাং জেলার নারীপুরুষ ওই এলাকায় এসে বসবাস করার কারণে এলাকার নাম হয়েছে চিটাগাং বস্তি। বাংলাদেশ ছেড়ে এদেশে আসার পর ও বাংলা দেশের চট্টগ্রাম জেলার মানুষ পুরানো পেশা ত্যাগ করেনি। বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এরা বসবাস করে পান চাষ শুরু করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। ফলে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে চিটাগাং বস্তি ত্রিপুরার একটি উল্লেখ যোগ্য পান চাষ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।চিটাগাংবস্তির পানের সুনাম এবং কদর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী আগরতলা শহর বা আসামের শিলচর শহরের পান রসিকদে রসনা মিটাচ্ছে চিটাগাং বস্তির উৎপন্ন পান।

পান চাষ এলাকার অর্থনীতির চাকা যেমন একদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল তেমনি চিটাগাং বস্তির পান চাষীদের জীবন জীবিকা ও অনেক উন্নত হয়ে ছিল।দেশ ত্যাগের দুঃখ এদে র মধ্যে ছিল না।কেননা এ দে শে এসেও পান চাষের মধ্যে এরা নিজেদের সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। কিন্তু চিটাগাং বস্তির সেই সোনালী দিন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। দয়াময় দে এবং রসময় দে নামে দুই পান চাষী তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে গভীর আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন।

দুই পান চাষী জানিয়েছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এক এক দিকে যেমন পান চাষে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তেমনি বিভিন্ন সমস্যা উঁকি-ঝুকি মারছে। রসময়দেয় তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন পানের প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমশ কমে যাচ্ছে।পান চাষিরা দুঃখ করে জানান বিভিন্ন রোগ শোকের কারণে বয়স্করা যেমন আগের মত পান খাচ্ছে না তেমনি নতুন প্রজন্ম পান চাষের দিকে ঝুঁকছে না। বাজারে নিত্য নতুন পানের বিকল্প বেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি তেরঙ্গা, ঘুটকা, পান মসলা, রসরাজ সহ বিভিন্ন জিনিস বাজারে এনেছে। যুবকরা সেগুলির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। এগুলো সেবন করা অত্যন্ত সহজ। এই প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে পান চাষের উপর। ঘুটকা,তেরঙ্গার,পানমসলার যেভাবে চাহিদা বাড়ছে তাতে এক সময়ে অন্যান্য বহু ফস লের মত পান চাষ ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পান চাষিরা। পান চাষিরা আরও একটি সমস্যার কথা তোলে ধরেছে।

তাছড়া, কুমারঘাট শহরে পান বিক্রেতাদের জন্য কোন পাইকারি বাজার শেড নেই। প্রতি মঙ্গল এবং শুক্রবার কুমারঘাট নেতাজি চৌমুনিতে একটি গাছের নিচে পান বিক্রির জন্য পাইকারি বাজা র বসে। স্থায়ী শেড ঘর না থা কার ফলে পান চাষীদের খোলা আকাশের নিচে বসেই পান বিক্রি করতে হচ্ছে। এই সমস্ত কারণে পান চাষিরা ক্রমশ উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *