আগরতলা, ২১ ফেব্রুয়ারি : সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে প্রচুর রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশ। বাংলাদেশ থেকে আমদানি পণ্য থেকে ওই রাজস্ব আদায় সঠিক ভাবে সম্ভব হচ্ছে না। তাতে, একাংশ অসাধু আমদানীকারক মুনাফা লুটছেন, এমনই গম্ভীর অভিযোগ উঠেছে। মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে মাছ আমদানিতে ওজনে কারচুপি করা হচ্ছে। সেখানে স্ক্যানার এবং ওজন পরিমাপের যন্ত্র না থাকায়, আমদানীকারকরা সুযোগ নিচ্ছেন। অবশ্য, মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট মণি পাল ওই অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, আমদানি করা মাছ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া, ওজনে কারচুপি কোনভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, অতিরিক্ত মাছ আনার চেষ্টা হলেই সেই পণ্য পঁচে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
অভিযোগ, মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত মাছ আমদানি হচ্ছে। কিন্তু, ওই মাছ সঠিকভাবে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া, প্রায়শই ওজনে বেশি মাছ আমদানি করে বিলে কম দেখানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিল না কেটেই সন্ধ্যায় ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে মাছ এপারে ঢুকছে। পরদিন সকালে বিল করা হচ্ছে। এখানেই কারচুপি করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, সাপ্তাহিক ছুটি এবং রাষ্ট্রীয় ছুটি ওই ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে বাণিজ্যে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন থেকে পরিচয় পত্র প্রদান করা হচ্ছে না বলে তাঁদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অভিযোগে আরও জানা গেছে, মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে মাছ ছাড়া প্রায় সমস্ত পণ্যের আমদানি আপাতত বন্ধ রয়েছে।
এ-বিষয়ে মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট মণি পালের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি ওই সমস্ত অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনে স্ক্যানার কিংবা ওজন পরিমাপের যন্ত্র নেই ঠিকই। কিন্ত, সমস্ত পণ্য পরীক্ষা করে দেখা হয়। তাছাড়া, ২৫ কেজির মাছের বাক্সে ৩০ কেজি মাছ আনা সম্ভব নয়। তাতে, ওই মাছ পঁচে যাওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাঁর দাবি, সমস্ত নিয়ম মেনেই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে। মাছ ছাড়াও সিমেন্ট, পিবিসি পাইপ, বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বাংলাদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে। এমনকি, খাদ্য সামগ্রী পরীক্ষার জন্যও পাঠানো হচ্ছে।
এদিন তিনি বলেন, মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন করিমগঞ্জ ডিভিশনের অধিনে রয়েছে। ফলে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনক্ষণ অন্যান্য ল্যান্ড কাস্টমস থেকে ভিন্ন আছে। তাঁর কথায়, মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস-এ সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি রবিবার এবং মার্চ থেকে আগস্ট শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি পালন করা হয়। ওইদিন সীমান্তে বাণিজ্য থাকে। তাছাড়া, দুই দেশের জাতীয় ছুটিতেও সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধ রাখা হচ্ছে।
এদিকে, শ্রমিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টিও তিনি স্পষ্ট করেছেন। তাঁর বক্তব্য, মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন সুসংগঠিত নয়। ফলে, পরিকাঠামোর অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। তাঁর কথায়, ওই সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন সম পরিমাণ গাড়ি আসে না। ফলে, শ্রমিকদের চাহিদাও প্রতিদিন এক থাকে না। তাই, স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন শ্রমিকদের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।
তিনি বলেন, মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স তৈরির কাজ বহুদিন ধরে আটকে রয়েছে। ওই কমপ্লেক্স নির্মাণে ২০১৬ সালে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে নানা জটিলতার কারণে আজও ওই প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর দাবি, পরিকাঠামোর অভাবে মনু ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন পরিচালনা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ওই কমপ্লেক্স তৈরি হলে পরিকাঠামোর দিক দিয়ে অনেকটাই উন্নত হবে এবং তাতে কাজে অনেক গতি আসবে।