নতুন দিল্লি ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫:
শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার নাগরিকদের ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪-২৫-এ উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতি নির্মলা সীতারমন আজ সংসদে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পেশ করেন।
সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয়ের প্রবণতা
সামাজিক ক্ষেত্রেগুলোতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় এর হার ছিল ২৩.৩%, সেখানে থেকে ২০২৫ অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয়েছে ২৬.২%। একইসাথে, ২০২১ অর্থবর্ষে সিএজিআর (যৌগিক বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার) অর্জিত হয়েছিল ১৫%। এথেকে এবারের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এটা স্পষ্ট করা হয় যে, মোট ব্যয়ের (টিই) শতকরা হিসাবে সরকারের সামাজিক পরিষেবা ব্যয় (এসএসই) ক্রমশ বৃদ্ধির প্রবণতার দিক লক্ষ্য করা গেছে। ফলে, যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এসএসই-র ব্যয় ২০২১ অর্থবর্ষে ছিল ১৪.৮ কোটি সেটা ২০২৫ অর্থবর্ষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.৭ লক্ষ কোটি টাকা।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় ১২% সিএজিআর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ অর্থবর্ষে ৫.৮ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২৫ অর্থবর্ষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.২ লক্ষ কোটি টাকা। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা বা সিএজিআর-এ বৃদ্ধির প্রবণতা ১৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ২০২১ আর্থিক বছরে ব্যয় যেখানে ছিল ৩.২ লক্ষ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৫ আর্থিক বছরে হয়েছে ৬.১ লক্ষ কোটি টাকা। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২২ অর্থ বছরের মধ্যে দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের মধ্যে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয়ের অংশ ২৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ভোগ্য ব্যয়
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সরকারি প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নে নিম্ন আয়ের পরিবারদের ভোগসাধনে ব্যয় করার চাহিদা যেমন উৎসাহিত হয়েছে তেমনি এবং উপার্জন কার্যকলাপকে উৎসাহিত করেছে। বিনামূল্যে বা ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্য, ভর্তুকিযুক্ত রান্নার জ্বালানি, বীমা যোজনা, বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মতো বিভিন্ন সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়ণ এই শ্রেণীর পরিবারদের আয় বৃদ্ধি করেছে। এই আর্থিক সুবিধাগুলোর প্রত্যক্ষ হস্তান্তরের ফলে আর্থিকভাবে বঞ্চিত অংশের পরিবারসমূহের কাছে অতিরিক্ত সহায় সম্পদ সরবরাহ হাতে পেরেছে যা তাদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করেছে।
সমীক্ষায় প্রতিফলিত হয়েছে যে, সামাজিক ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ অসাম্য হ্রাস করেছে এবং ভোগ্য ব্যয় বৃদ্ধি করেছে । ভোগ্য ব্যয় ক্ষেত্রে অসাম্য যে জিনি সহগ বা কো-এফিসিয়েন্ট দ্বারা পরিমাপ করা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তার মান গ্রামীণ এলাকায় ছিল ০.২৬৬- যা ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে অনেকটা হ্রাস পেয়ে হয় ০.২৩৭। এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে শহরাঞ্চলে এর ম্যান ছিল ০.৩১৪ যা ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে নেমে এসেছে ০.২৮৪-তে ।
সমীক্ষার নথিতে ২০২৩-২৪ সালের গৃহস্থালি খরচ সমীক্ষার (এইচসিইএস) তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে যে ভোগ্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে নগর-গ্রামীণ ব্যবধান সংকুচিত হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের হিসেবে দেখা গেছে যে, গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের একদম নিচের দিকের ৫ থেকে ১০% জনসংখ্যার মধ্যে গড় মাসিক মাথাপিছু ব্যয়ের (মান্থলি পার ক্যাপিটা ইনকাম, এমপিএসি) সবচেয়ে বৃদ্ধি ঘটেছে । গড় এমপিসিই-তে নগর-গ্রামীণ ব্যবধান ২০১১-১২ সালের ৮৪% থেকে ২০২২-২৩ সালে ৭১%-এ নেমে এসেছে। ২০২৩-২৪ সালে এটি আরও হ্রাস পেয়ে ৭০% এ নেমে এসেছে, যা গ্রামাঞ্চলে খরচ বৃদ্ধির দীর্ঘস্থায়ী গতি নিশ্চিত করে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকারের বিভিন্ন আর্থিক নীতির মধ্য দিয়ে আয় বণ্টনএর চেহারা নতুন আকার নিচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের মধ্যে খাদ্য ভর্তুকি সবচেয়ে বড় আর্থিক ব্যয়। ২০২২২-২৩-এ, কেন্দ্রীয় সরকার বিনামূল্যে এবং ভর্তুকিযুক্ত খাদ্য রেশন প্রদানের জন্য পিএম প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা (পিএমজিকেএওয়াই)-তে তার বাজেটের ৬.৫% ব্যয় করেছে।
দরিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের মধ্যে বৃহত্তর সুবিধার কেন্দ্রীকরণ থেকে বোঝা যায় যে পিডিএস/পিএমজিকেএওয়াই নীতিগুলি নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করছে এবং অন্যান্য দুর্বল পরিবারগুলিকে আয়ের ওঠানামা এবং দারিদ্র্য থেকে রক্ষা করে। ২০২২-২৩ সালের হিসেবে অনুযায়ী, সরকারি ভর্তুকির মূল্য দিয়ে গ্রামীণ এলাকার তলদেশের ২০% পরিবারে পারিবারিক ভোগ্য ব্যয়ের ৭% খরচ মিটেছে, তবে শীর্ষ ২০% এর মধ্যে তা ছিল ২%। শহরাঞ্চলেও একই ধরনের উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে।
সমীক্ষায়, জনসংখ্যার বিভিন্ন অংশে এই সুবিধাগুলি কিভাবে বরাদ্দ হয়েছে এর উপর আলোকপাত করে। বলে হয়, জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশের রেশন কার্ডের সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে ৫৯ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে (বিপিএল), অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা (এএওয়াই) বা অগ্রাধিকার গৃহস্থালী (পিএইচএইচ) কার্ড রয়েছে।