আগরতলা,২৫ ডিসেম্বর : সুশাসনের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প ও পরিষেবাগুলি সমাজের প্রান্তিক জনপদের অন্তিম ব্যক্তির কাছে স্বচ্ছতার সাথে পৌঁছে দেওয়া। রাজ্য সরকার জনকল্যাণে সুশাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এই লক্ষ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিষেবার সুযোগ স্বচ্ছতার সাথে প্রান্তিক জনপদের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আজ প্রজ্ঞাভবনে সুশাসন দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণ যাতে প্রশাসনের সমস্ত সুযোগ সুবিধা সহজে ও স্বচ্ছতার সাথে পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে রাজ্যে প্রশাসনকে গণমুখী করে তোলা হচ্ছে। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিবসকে আজ দেশব্যাপী সুশাসন দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী ছিলেন একাধারে একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, কবি ও সাহিত্যিক। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামেও তাঁর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্বপ্ন ছিল দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা। সেই লক্ষ্যে তিনি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ী ভারতকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে অক্লান্ত অবদান রেখেছিলেন। আজ সুশাসন দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
উল্লেখ্য, ত্রিপুরা ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশন (টিআইএফটি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবছর সুশাসন দিবসের মূল ভাবনা হচ্ছে ‘বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে ভারতের পথ হচ্ছে সুশাসন ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকদের ক্ষমতায়ন।’ অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা সহ অন্যান্য অতিথিগণ টিআইএফটি-র একটি নিউজ লেটার, জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় এবং টিআইএফটির যৌথ স্টাডি রিপোর্ট, ত্রিপুরায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পের উপর অভ্যন্তরীণ অ্যাসেসমেন্ট স্টাডি রিপোর্ট এবং জেলা সুশাসন সূচকের উপর একটি ফ্রেমওয়ার্ক ও ওয়ারকেটের (WARCAT) উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু ২.০ (দ্বিতীয় পর্বের) সূচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদার কথা মাথায় রেখে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প চালু করছে। এই প্রকল্পগুলির যাতে সঠিক উপায়ে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় সেই লক্ষ্যেই সুশাসন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিক প্রচেষ্টায় উত্তর পূর্বাঞ্চল এখন বিকাশের পথে হাঁটছে। রাজ্যের উন্নয়ন এখন বহিরাজ্যে প্রশংসিত হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে রাজ্যে সুশাসন ব্যবস্থার জন্য।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই জনগণের প্রতি সমর্পণের ভাবনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। রাজ্যের বর্তমান সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার অটলবিহারী বাজপেয়ীর চিন্তাধারাকে কাজে লাগিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ত্রিপুরা ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশনের (টিআইএফটি) ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, টিআইএফটি গত এক বছরে নীতি আয়োগের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রাজ্যের উন্নয়নের রোডম্যাপ তৈরি, মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম ওয়ার রুম বৈঠকের উন্নয়ন প্রকল্প পর্যালোচনা, বাণিজ্য সংস্কার পরিকল্পনা-২০২৪, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস উন্নত করার উপর কর্মশালা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন, রাজ্যে আয়ুষ্মান ভারত স্কুল স্বাস্থ্য মিশন নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, নীতি আয়োগের উদ্যোগে রাজ্যে ‘সম্পূর্ণতা অভিযান’ পরিচালনা, মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু ২০ কর্মসূচিতে নাগরিকদের সাথে সরকারের সংযোগ আরও শক্তিশালী করার মতো রাজ্যের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, খুব অল্প সময়ে সুশাসন দপ্তর রাজ্যে কাজের নিরিখে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করেছে। সম্প্রতি রাজ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের প্লেনারি সেশনের সফল আয়োজন সুশাসন ব্যবস্থার ফলেই সম্ভব হয়েছে। এমনকি সুশাসন ব্যবস্থার ফলেই রাজ্যে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার প্রভাব দ্রুত কাটিয়ে উঠাও সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার সরকারি প্রকল্প ও পরিষেবাগুলি সমাজের অন্তিম ব্যক্তির কাছে স্বচ্ছতার সাথে পৌঁছে দিতে প্রয়াস নিয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজ্য সুশাসন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মুখ্য বনসংরক্ষক চৈতন্য মূর্তি।