বেআইনি মদ, নগদ টাকা, মাদক, অস্ত্র এবং বিনামূল্যে পণ্যের প্রবাহ রুখতে আন্তঃরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে
নয়াদিল্লি, ৩ এপ্রিল: ভারতের নির্বাচন কমিশন আজ অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং প্রলোভনমুক্ত নির্বাচনের জন্য ২০২৪ সালের লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার চলমান সাধারণ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ, আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে। এই যৌথ পর্যালোচনা বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবেশী রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির আধিকারিকদের পাশাপাশি সীমান্তের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির মধ্যে ক্রমাগত সমন্বয় ও সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সমস্ত অংশীদারদের একটি একক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। কমিশন এই বৈঠকে প্রতিটি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করেছে।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং সুখবীর সিং সান্ধুর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং সীমান্ত বাহিনী সহ কেন্দ্রীয় বিভিন্ন এজেন্সির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার তার উদ্বোধনী বক্তব্যে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং প্রলোভনমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য কমিশনের অঙ্গীকার ও এর রূপরেখা তুলে ধরেন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা বজায় রাখতে এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সকল অংশীদারদের একযোগে কাজ করার আহ্বান রাখেন। প্রত্যেক ভোটার যাতে নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং এজেন্সিগুলিকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং ভয়মুক্ত নির্বাচনের জন্য তাদের ‘সংকল্প’কে দৃঢ় ‘পদক্ষেপে’ রূপান্তরিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈঠকে আলোচিত মূল বিষয়গুলির মধ্যে ছিল প্রতিবেশী দেশ/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো, সমস্ত রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে প্রদেয় পর্যাপ্ত পরিমাণে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী (সিএপিএফ) ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। সীমান্ত নির্বাচনের জন্য যাওয়া রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে সিএপিএফ কর্মীদের যাতায়াত ও পরিবহনের জন্য উপকরণ সহায়তা; নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে এমন সীমান্ত এলাকায় ফ্ল্যাশপয়েন্ট চিহ্নিতকরণ এবং পর্যবেক্ষণ; অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দূরীকরণে আগাম পদক্ষেপ নেয়া এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষিত করার অনিবার্যতা সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমান্তে মাদক, মদ, অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ নিষিদ্ধ পণ্যের চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারির ওপর জোর দিয়েছে কমিশন। বিভিন্ন রাজ্যে অবৈধ গাঁজা চাষ বন্ধ করার ও সীমান্তের ওপারে মদ এবং নগদ অর্থ বহনের যাতায়াতের পয়েন্টগুলি চিহ্নিত করে যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অরুণাচল প্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্রের মতো ১১টি রাজ্যের চ্যালেঞ্জিং এলাকায় ভোটগ্রহণকারী দল নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় বায়ুসেনা এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ দফতরের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপরে পর্যালোচনা করেছে কমিশন। বিশেষ করে ছত্তিশগড় এবং জম্মু ও কাশ্মীরের মতো রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিক কর্মী ও প্রার্থীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকির আশঙ্কার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মণিপুরে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে সুস্থ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে| কমিশন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সহায়তা করার জন্য এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে।
নিম্নলিখিত সাধারণ নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে:
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত
১- আন্তর্জাতিক ও আন্তঃরাজ্য সীমান্তের সমন্বিত চেকপোস্ট সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে কঠোর নজরদারি করা৷
২- অপরাধী ও সমাজবিরোধীদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যের আদান প্রদান৷
৩- ভুয়ো ভোট রুখতে শেষ ৪৮ ঘণ্টায় আন্তঃরাজ্য সীমান্ত সিল করা৷
৪- সীমান্তবর্তী জেলাগুলির মধ্যে নিয়মিত আন্তঃরাজ্য সমন্বয় বৈঠক করা৷
৫- আন্তঃরাজ্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে রাজ্য পুলিশের টহলদারি বাড়ানো৷
৬- সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে কৌশলগত স্থানে অতিরিক্ত নাকা চেকিং বসানো।
৭- ভোটের দিন আন্তঃরাজ্য সীমান্ত সিল করা৷
৮- সীমান্তবর্তী রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির আবগারি কমিশনারদের পারমিটের সত্যতা যাচাই নিশ্চিত করা, বিশেষত সীমান্তবর্তী জেলার মদের দোকানগুলি নিয়ে।
৯- লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের সময়োপযোগী সাক্ষ্য ও জামিন অযোগ্য পরোয়ানা কার্যকর করা৷
১০- পলাতক, নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা৷
১১- হুমকির আশঙ্কার ভিত্তিতে রাজনৈতিক কর্মী/প্রার্থীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদান করা৷
ব্যয় পর্যবেক্ষণ:
১- আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেআইনি মদ, নগদ অর্থ, মাদকের প্রবাহ নির্মূল করা।
২- সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে চেকপোস্টগুলিতে নজরদারি জোরদার করা৷
৩- পুলিশ, আবগারি, পরিবহণ, জিএসটি ও বন দফতরের যৌথ চেকিং ও অপারেশন চালানো৷
৪- হেলিপ্যাড, বিমানবন্দর, বাস স্টেশন ও রেল স্টেশনে কড়া নজরদারি৷
৫- মদ ও মাদকদ্রব্যের কিংপিনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা; দেশী মদের প্রবাহ সীমিত করা; পদ্ধতিগতভাবে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সামনে এবং পিছনে সংযোগ গড়ে তোলা৷
৬- মদ, নগদ অর্থ, মাদক এবং বিনামূল্যে পরিবহণের জন্য সংবেদনশীল রুটগুলির ম্যাপিং করা৷
কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে নির্দেশিকা
১- ভারত-মায়ানমার সীমান্তে কড়া নজরদারির দায়িত্ব অসম রাইফেলসকে, ভারত-নেপাল সীমান্ত, বিশেষত নেপালের সাথে যেখানে উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে সেখানকার দায়িত্ব এসএসবিকে; ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এবং পশ্চিম সীমান্ত বিএসএফকে; ভারত-চীন সীমান্তে আইটিবিপিকে এবং উপকূলীয় রাজ্যগুলিতে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীকে কড়া নজরদারি রাখার নির্দেশ৷
২- অসম রাইফেলস রাজ্য পুলিশ, সিএপিএফ ইত্যাদির সঙ্গে নিয়মিত যৌথ নিরাপত্তা সমন্বয় বৈঠক করবে।
৩- ভোটগ্রহণের বিশেষ করে ৭২ ঘণ্টার আগে নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তে কোনও বেআইনি কার্যকলাপের জন্য কড়া নজর রাখবে এসএসবি।
৪- নাগরিক প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রক্ষা করে বিভিন্ন এলাকায় অন্তর্ভুক্ত সিএপিএফ জওয়ানদের এলাকার পরিচিতি নিশ্চিত করতে হবে৷
৫- রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে জয়েন্ট চেকপোস্ট বসানো হবে৷
মুখ্যসচিব, ডিজিপি, প্রধান সচিব (স্বরাষ্ট্র), জনসংযোগ সচিব (আবগারি), মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং সমস্ত রাজ্য / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আসাম রাইফেলস, সশস্ত্র সীমা সুরক্ষা বল, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি সিআরপিএফ প্রধান, কেন্দ্রীয় সিএপিএফের নোডাল অফিসার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রতিনিধি এবং প্রতিরক্ষা ও রেল মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা সহ সীমান্ত সুরক্ষার সাথে জড়িত কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির প্রধানরা পর্যালোচনা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।