কলকাতা, ২০ আগস্ট (হি.স.): স্বাধীনতার পঁচাত্তর অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে ললিতকলা ও সাহিত্যে সমর্পিত অখিল ভারতীয় সংস্থা ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ’, দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত আয়োজিত ১-১৫ আগস্ট ২০২৩, জেলায় জেলায় পক্ষকালব্যাপী অখণ্ডভারত রক্ষার্থে ভারতমাতা ও ভারতমাতার বীর সন্তান আত্মবলিদানকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি কলা সাধনার মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান “অমৃত অর্পণ” সুচারুরূপে সম্পন্ন হ’ল।
প্রতিটি জেলায় সংস্কার ভারতীর রীতি অনুসারে ভাবসঙ্গীত এবং দীপমন্ত্রসহ দীপ প্রজ্বলন ও ভারতমাতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পপ্রদানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অন্তিম পর্বে অখণ্ড ‘বন্দেমাতরম’ গায়নের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপন হয়। এই কার্যক্রমে জেলায় জেলায় বিভিন্ন দিনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের কার্যকর্তাগণ। যথাক্রমে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের সংস্থাপক সদস্য ও দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের অন্যতম সহ সভাপতি সুভাষ ভট্টাচার্য, দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের অন্যতম সহ সভাপতি ডঃ স্বপন মুখোপাধ্যায়, দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের পরামর্শক তথা কেন্দ্রীয় কোষটোলীর সদস্য ভরত কুণ্ডু , দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত, দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সহ সাধারণ সম্পাদক অমিত দে, দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের বিভাগ সংগঠন সম্পাদক উদয় কুমার দাস, এবং দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের কোষাধ্যক্ষ গোপাল কুণ্ডু। এছাড়াও ছিলেন দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহাশ্বেতা চক্রবর্তী, অমিতাভ মুখোপাধ্যায় ও রীণা ব্যানার্জী ।
এনাদের ‘অমৃত অর্পণ’ তৎসহ সুস্থ ভারতীয় সংস্কৃতি প্রচারের কাজে সংস্কার ভারতীর ভূমিকা প্রসঙ্গে মূল্যবান বৌদ্ধিক প্রদান উপস্থিত সকল জেলার সদস্যদের অনুপ্রাণিত করে।
৫ আগস্ট উত্তর কলকাতা জেলা বয়েজ ওন লাইব্রেরী হলে, স্বাধীনতার ৭৫- অমৃত মহোৎসবের সমাপন সমারোহ ‘অমৃত অর্পণ’ অনুষ্ঠানে ‘প্রণমি তোমারে জন্মভূমি’ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ড: স্বপন মুখোপাধ্যায়, সুভাষ ভট্টাচার্য, ভরত কুণ্ডু ও অমিত দে। ঐ দিন উত্তর কলকাতা জেলার অন্তর্গত চারটি চর্চাকেন্দ্র যথাক্রমে উত্তর কলকাতা, বাগুইহাটি, দেশবন্ধুনগর, দক্ষিণেশ্বর সঙ্গীত, নৃত্য ও কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান হয়।
৫ আগস্ট সংস্কার ভারতী উত্তর ২৪ পরগণা জেলা গোবরডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্ন নিবেদিতা শিশু তীর্থের অনুষ্ঠান কক্ষে মহতী স্বাধীনতা প্রাপ্তির নেপথ্যে থাকা এক নীরব যোদ্ধা কবি, সাহিত্যিক দীনবন্ধু মিত্রের অবদানকে কেন্দ্র করে আয়োজন করে আলোচনা সভার। সুবক্তা অধ্যাপক ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ মজুমদার তুলে ধরেন স্বাধীনতা আন্দোলনে দীনবন্ধু মিত্রের অমূল্য অবদান । এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কার ভারতীর প্রদেশ অধিকারী গোপাল কুন্ডু এবং দুজন বিশিষ্ট সাংবাদিক বন্ধু নীরেশ ভৌমিক ও পাঁচুগোপাল হাজরা।
দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ ৬ আগস্ট, মহানির্বাণ মঠের (রাসবিহারী এভিনিউ, ত্রিকোণ পার্ক) নাটমন্দিরে, দক্ষিণ কলকাতা জেলা সমিতি আয়োজিত ‘অমৃত অর্পণ’ অনুষ্ঠান পাঁচটি বিধা (নৃত্য-গীতি- আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রর্দশনী ও তাৎক্ষণিক ভাষ্কর্য নির্মাণ) সহযোগে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রান্তের বিভাগ সংগঠন সম্পাদক উদয় কুমার দাস, প্রদেশের অন্যতম সম্পাদিকা শ্রীমতী রীণা ব্যানার্জী, সাহিত্যবিধার সহপ্রমুখ অরিত্র ঘোষ দস্তিদার এবং উত্তর কলকাতা জেলার সম্পাদিকা শ্রীমতী মিতালী ভট্টাচার্য্য আমন্ত্রিত অতিথিরূপে উপস্থিত ছিলেন। ঐ দিন আর একটি বিশেষ আকর্ষণ ভাস্কর্য শিল্পী শীর্ষ আচার্যের তাৎক্ষণিক ভাষ্কর্য নির্মাণ।
ঐদিনই সোনারপুর ইস্টার্ন রেলওয়ে সত্যজিৎ রায় ইনস্টিটিউটের ‘সত্যজিৎ মঞ্চে’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ‘অমৃত অর্পণ’ অনুষ্ঠান ‘বন্দে জননী ভারতবর্ষ’ অনুষ্ঠিত হয় । সভায় সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ সঙ্ঘচালক ডঃ জয়ন্ত রায়চৌধুরী এবং প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন বিজ্ঞানী তথা সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত কার্যবাহ ডঃ জিষ্ণু বসু। উপস্থিত ছিলেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের সুভাষ ভট্টাচার্য, ভরত কুণ্ডু এবং বিশিষ্ট ওড়িশি নৃত্য সাধিকা শ্রীমতী মোনালিসা ঘোষ।
আবার ঐ একই দিনে সন্ধ্যেবেলায় সিউড়ি’র রবীন্দ্রসদন মঞ্চে সংস্কার ভারতী, বীরভূম জেলা আয়োজিত স্বাধীনতার পঁচাত্তর- সমাপন সমারোহ ‘অমৃত অর্পণ’ অনুষ্ঠানটি সুচারুরূপে সুসম্পন্ন হয়। স্বাগত ভাষণ দেন জেলা সম্পাদক সুদীপ কুমার চট্টোপাধ্যায়। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডঃ স্বপন মুখোপাধ্যায়, কল্লোল ভট্টাচার্য, স্বপ্না চক্রবর্তী, অমিত অধিকারী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরাঙ্গনা দু’কড়িবালা দেবীর দুই নাতি অশোক কুমার চক্রবর্তী এবং পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী। বীরভূম জেলার উপস্থাপিত এই শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানটি শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের মন জয় করে এবং প্রশংসিত হয়।
১১ আগস্ট ছিল ‘অমৃত অর্পণ’ কার্যক্রমের তৃতীয় দিন । এদিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নীলদর্পণ প্রেক্ষাগৃহে (ত্রিকোণ পার্ক, বনগাঁ)। সকল বীর বিপ্লবীদের প্রতি স্মরণ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে পাঁচটি বিধার সমন্বয়ে। অনুষ্ঠানে অতিথিরূপে উপস্থিত ছিলেন সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত । বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ সুময় হীরা। জেলা সভাপতি শাশ্বতী নাথ। প্রান্ত পরামর্শক তথা কেন্দ্রীয় কোষ টোলীর সদস্য ভরত কুন্ডু।
১১ আগস্টেই সংস্কার ভারতী পূর্ব বর্ধমান জেলা শাখা বাদামতলা বিবেকানন্দ শিশু মন্দির প্রাঙ্গণে স্বাধীনতার ৭৫ বৎসর সমাপন সমারোহ উৎসব ‘অমৃত অর্পণ’ সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয় । প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ৩ বিধার সমন্বয়ে অনুষ্ঠানের অগ্রগতি ঘটে। অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল ‘এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে’। প্রত্যেক সদস্য সদস্যা একজন ক’রে বিপ্লবীর জীবনচরিত তুলে ধরেন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কার ভারতী প্রান্ত বিভাগ সংগঠন সম্পাদক উদয় দাস।
ঐদিনই অমৃত মহোৎসব সাড়ম্বরে পালিত হয় ঝাড়গ্রাম জেলায়। উপস্থিত ছিলেন প্রান্ত সহ সভাপতি সুভাষ ভট্টাচার্য, প্রান্তের সম্পাদক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়, প্রান্ত সমিতির সদস্য নিখিল সামাদ্দার । ভারতমাতার বন্দনা শুরু হয় স্থানীয় লোকনৃত্য পাতা নাচ গানের মাধ্যমে। এর পর ছৌ নাচ এবং সবশেষে অখন্ড ‘বন্দেমাতরম’ গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মধুশ্রী হাতিয়াল।
চতুর্থ কার্যক্রম হয় ১২ আগস্ট । ব্যাণ্ডেল পূর্ব নলডাঙ্গার সেনগুপ্ত বাড়ির দুর্গা মন্দিরে, হুগলী জেলা সমিতির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভাগ সংগঠন সম্পাদক মাননীয় উদয় দাস মহাশয় ও সংঘ প্রচারক শ্রী মানিক চন্দ্র পাল এবং হুগলী জেলার সহসভাপতি নীহার রঞ্জন সেন । দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, নৃত্য, নৃত্যনাট্য ও যোগাসন পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয়।
পঞ্চম দিনে অর্থাৎ ১৩ আগস্ট শিবপুর পাবলিক লাইব্রেরি মঞ্চে সংস্কার ভারতী, হাওড়া নগর আয়োজিত স্বাধীনতার পঁচাত্তর- সমাপন সমারোহ ‘অমৃত অর্পণ’ অনুষ্ঠানটি সুচারুরূপে সুসম্পন্ন হয়। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা প্রবীর ঘোষাল, আইনজীবী দেবরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, শাখা, প্রদেশ এবং কেন্দ্রীয় সমিতির কার্যকর্তা রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, উদয় দাস, মহাশ্বেতা চক্রবর্তী ও ভরত কুণ্ডু।
একই দিনে সুদর্শন ভবন, বিষ্ণুপুরে অনুষ্ঠিত হল এক অনবদ্য ‘অমৃত অর্পণ’ কার্যক্রম। উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিষ্ণুপুর নগর কার্যবাহ শ্রী সন্দীপন চক্রবর্তী । শাস্ত্রীয় (কন্ঠ ও যন্ত্র) সঙ্গীতের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন জেলার সদস্যরা।
ঐদিন সন্ধ্যায় আরো একটি ঘরোয়া পরিবেশে ‘অমৃত অর্পণ’ উৎসব আয়োজিত হ’য়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে। অনুষ্ঠানটি সদস্যা ডলি মণ্ডলের ভবনে। ৭৭তম স্বাধীনতার প্রাক্কালে দেশাত্মবোধক সংগীত, কবিতা সহ নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।
১৫ আগস্ট ছিল ‘অমৃত অর্পণ’ অনুষ্ঠানের শেষ দিন। ভারতের স্বাধীনতার ৭৭তম পুণ্যদিনে ‘অমৃত অর্পণে’ ব্রতী হয়েছিলেন হাওড়া গ্রামীণ জেলা ও নদীয়া জেলা। সারাদিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন ছিল এই দু’টি জেলার। হাওড়া জেলার অনুষ্ঠানটি বাগনান ও আমতা চর্চাকেন্দ্রের উদ্যোগে আমতাতে অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত এডভোকেট ফটিক চক্রবর্তী। বিচারকের আসনে- অধ্যাপক সৌমেন চক্রবর্তী, অধ্যাপিকা পারমিতা চ্যাটার্জী ও মৌমিতা চ্যাটার্জী। জেলা সম্পাদক, সহ সম্পাদক ও আমতা চর্চাকেন্দ্রের সদস্য-সদস্যা। অপরদিকে নদীয়া জেলার অনুষ্ঠানটি হয় নবদ্বীপের সুদর্শন মন্দিরে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডঃ অরুণ কুমার চক্রবর্তী। ছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নদীয়া জেলার সভাপতি শ্রুতিশেখর গোস্বামী। প্রদেশ থেকে ডঃ স্বপন মুখোপাধ্যায় ছাড়াও নদীয়া জেলার সম্পাদক ও সভাপতি সকল সদস্য-সদস্যারা উপস্থিত ছিলেন।