গুয়াহাটি, ২৫ এপ্রিল (হি.স.) : অসমে শিক্ষার গুণগত সমীক্ষার ঘোষিত ফলাফলে প্রথম স্থান দখল করেছে শিবসাগর জেলা। গুণোৎসব ২০২৩-এর ফলাফল ঘোষণা করে আজ মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। ফল ঘোষণা করার পাশাপাশি স্কুলসমূহের পরিকাঠামো এবং শিক্ষার মান উন্নত হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া আগামী ১০ মে ৬০০০ নতুন শিক্ষক প্ৰাথমিক এবং নিম্ন প্ৰাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত গুণোৎসব ২০২৩-এর ফলাফল অনুযায়ী শিবসাগর, চড়াইদেও, গোলাঘাট এবং মাজুলি যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থান দখল করেছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে কামরূপ মেট্রো (গুয়াহাটি)-র অবস্থান ২৯ নম্বরে নেমেছে।
সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে গুণোৎসব ২০২৩-এর ফলাফল ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গুণোৎসবের মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অসমে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক মূল্যায়ন করাই গুণোৎসবের মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত, পরিকাঠামো, শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্ৰে গুণগত মানের উৎকর্ষ নিৰ্ণয় করা হয়।
এক কথায় শিক্ষার্থীদের কেমন লেখাপড়া চলছে, দৈনন্দিন কাজকর্মের পাশপাশি কেমন মৌলিক জ্ঞান আহরণ করছে তারা তা অধ্যয়ন করতে ২০১৭ সালে অসমে চালু হয়েছে গুণোৎসব-এর সরকারি কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে জেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধনের প্রশাসনিক স্তরে এক পর্যবেক্ষণ অভিযান চালানো হয়। রাজ্যের শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত গুণোৎসবে মন্ত্রী-বিধায়ক ছাড়াও প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
ড. হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা জানান, এবারের গুণোৎসব চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাজ্যের ৪৪,৫৩১টি স্কুলের ৪১ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রী যথাক্রমে প্ৰথম শ্ৰেণি থেকে নবম শ্ৰেণি পর্যন্ত এবং অবশ্যই স্কুলসমূহের গুণগত মূল্যায়ন করা হয়েছে। গুণোৎসবে ছাত্ৰছাত্ৰীদের উপস্থিতির হার ছিল ৯৬.৬৯ শতাংশ। এর মধ্যে ১৯ হাজার স্কুল ‘এ গ্ৰেড’ পেয়েছে। ৭,০০০ স্কুল পেয়েছে ‘বি গ্ৰেড’, ‘সি’ গ্ৰেড পেয়েছে ১,৯৭২টি এবং ৭৬৭টি স্কুল পেয়েছে ‘ডি গ্ৰেড’।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্কুলগুলিতে ছাত্ৰছাত্ৰী সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হত। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। এখন সরকারি অর্থের সদ্ব্যবহার হচ্ছে। এখন প্ৰত্যেক ছাত্ৰছাত্ৰীর ডিজিটাল ডেটা আছে। বলেন, একটি মহল গুণোৎসবকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের অপচেষ্টা বিফল হয়েছে। গুণোৎসব প্ৰমাণ করেছে, ভালো সর্বদা ভালোই হয়। গুণোৎসবে রাজ্যের মুখ্যসচিব থেকে চৌকিদার পর্যন্ত ভালোভাবে কার্য সম্পাদন করেছেন।
মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, গুণোৎসবে শিবসাগর জেলা এবারও প্রথম স্থান দখল করেছে। এছাড়া চড়াইদেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান দখল করেছে গোলাঘাট জেলা। শিবসাগরের সরকারি বিদ্যালয়ে ভরতি হতে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা লাইন ধরেন।
ড. শর্মা বলেন, শিক্ষাক্ষেত্ৰে শীৰ্ষ পাঁচের মধ্যে রয়েছে অসম। ১১,৮৮৬টি স্কুল পেয়েছে ‘এ প্লাস’। সংখ্যা বেড়েছে ‘এ প্লাস’ এবং ‘এ’-প্রাপ্ত স্কুল। ৩০ শতাংশ স্কুল পেয়েছে ‘এ প্লাস’। তবে গত চার বছর ধরে কারবি আংলং এবং পশ্চিম কারবি জেলার খারাপ ফলাফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া চিরাং এবারও পেছনের সারিতে রয়েছে। অবশ্য এ ব্যাপারে শিক্ষা বিভাগকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। ‘সি’ এবং ‘ডি’ গ্ৰেড প্ৰাপ্ত স্কুলগুলিতে গিয়ে এর কারণ বের করতে শিক্ষামন্ত্ৰীকে অনুরোধ জানিয়েছেন হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা। ওই সব স্কুলে কী অসুবিধা আছে, শিক্ষকের প্ৰয়োজনীতা আছে কি না, সে সব বিষয়ে খোঁজখবর নিতে হবে। বলেন, কোনও এক শিক্ষা আধিকারিক এই কাজ করবেন। তিনি জানান, এখন থেকে গুণোৎসব থেকে পরীক্ষায় ১০ শতাংশ নম্বর যোগ করা হবে।
তিনি বলেন, স্কুলগুলির ইউনিফৰ্মের কোয়ালিটি দেখে তার ওপর গুণোৎসবের নম্বর দিতে হবে। খারাপ ইউনিফৰ্ম সংবলিত স্কুলগুলিতে এর মাধ্যমে কাজ করা হবে।
এদিকে ধৰ্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলের শিক্ষা ক্ষেত্ৰ বেশ উন্নত হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্ৰীয়ে। বলেন, মেডিক্যালে ৩০০-এর বেশি আসন পেয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ প্লাস’ প্ৰাপ্ত স্কুলগুলিতে ঠিকাভিত্তিক শিক্ষকদের চাকরি নিময়মিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আগে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যাঞ্জলি-র অধীনে জনসাধারণ ইতিমধ্যে ৭৪ হাজার বৈদ্যুতিক ফ্যান স্ব-স্ব এলাকার স্কুলগুলিতে উপহার দিয়েছেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্ৰীয়ে। জানান, ১৬,২৪৪ জন প্ৰাক্তন ছাত্ৰছাত্ৰী অন্য সমগ্রীও দান করেছেন। তবে কেবল দানই নয়, প্ৰাক্তন ছাত্ৰছাত্ৰীদের সপ্তাহে বা মাসে একদিন কোনও স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিতে আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

