হাফলং (অসম), ১৭ এপ্রিল (হি.স.) : জলের আরেক নাম জীবন। কিন্তু এই জলের জন্য প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ করতে হচ্ছে হাফলং শহরের নাগরিকদের। হাফলং শহরে পানীয় জলের তীব্র সংকটে হাহাকার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই এবার পানীয় জলের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হলেন হাফলং শহরের নাগরিকরা।
পানীয় জল মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু হাফলং শহরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ পানীয় জল সরবরাহ না করে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারকে ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ। কারণ এভাবে মাসের পর মাস জল সরবরাহ না করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ ভারতীয় সংবিধানের ২১ ধারাকে লঙ্ঘন করে মানবধিকার ভঙ্গ করেছে বলে হাফলং শহরের নাগরিক মিঠুন সরকার মন্তব্য করেছন।
তিনি বলেন, জল মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ হাফলং শহরে বিভিন্ন স্থানে এভাবে মাসের পর মাস জল সরবরাহ না করে মানুষের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করছে বলে হাফলং জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের বিরুদ্ধে আদালতে এক অভিযোগ জানিয়ে এর সুবিচার চেয়েছে।
মিঠুন সরকার জানিয়েছেন, গত ২৫ জানুয়ারি তিনি এবং স্থানীয় নাগরিকরা মিলে হাফলং জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের সচিবের কাছে এক অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, হাফলং বাজার এলাকায় গত ৭৫ দিন থেকে জল সরবরাহ করা হয়নি। তাছাড়া শহরের এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে তিন মাসের বেশি সময় থেকে জল সরবরাহ করা হয়নি। তবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে জলের সংযোগ নিয়ে দিব্যি জল পেয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন শহরের নাগরিকরা।
অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের কিছু কর্মী শহরের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের অবৈধ জলের সংযোগ করে দিয়েছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ বা হাফলং জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের কার্যনির্বাহী অভিযন্তা সত্যব্রত নাথ এ সব রুখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ। এমন-কি শহরের নাগরিকরা এ নিয়ে অভিযোগ জানানোর পরও তিনি এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের কার্যনির্বহী অভিযন্তা সত্যব্রত নাথ এক নির্দেশনা জারি করে অনাবৃষ্টির দরুন জলাশয় শুকিয়ে গেছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের উৎসস্থলগুলি শুকিয়ে গেছে। তাই জল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ শহরে কীভাবে জল সরবরাহ করা যায় তা নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের আধিকারিক প্রসেনজিৎ লাংথাসা জানিয়েছেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবার জলের সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে। কারণ গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত একদম বৃষ্টি না হওয়ায় জলাশয়গুলি ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের উৎসস্থলগুলি শুকিয়ে যাওয়ার দরুন এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ২০২২ সালের মে মাসে ডিমা হাসাও জেলায় যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছিল সে জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের বেশ কিছু প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে বর্তমানে দিয়ুংরাংখল ও কৃষ্ণনগর গ্রেভেটি লাইন থেকে জল তুলে সরবরাহ করা হচ্ছে যদিও, তা পর্যাপ্ত নয়। কারণ হাফলং শহরে জল সরবরাহ করতে ৫০ লক্ষ লিটার জলের প্রয়োজন। কিন্তু হাফলং শহরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে শুধু ৫ লক্ষ লিটার জল জমা করে রাখা সম্ভব। তাই শহরে পানীয় জল সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়েছে বলে সাফাই দিয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টি না হলে এই সমস্যা থাকবে। তবে আগামী বছর থেকে এভাবে জলের সমস্যা থাকবে না। কারণ এবার উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদের প্ল্যানিং বোর্ডে হাফলং শহরে জলের ব্যবস্থা উন্নত করতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছন প্রসেনজিৎ লাংথাসা।
এদিকে হাফলং শহরে জলের এই তীব্র হাহাকার পরিস্থিতির মধ্যে জলের ব্যবসা ও বেশ জমে উঠেছে। গাড়ি দিয়ে শহরে জল সরবরাহ করছে কিছু ব্যবসায়ী তা চড়া দামে শহরে এখন নাগরিকদের জল কিনতে হচ্ছে প্রতি দু-হাজার দুশো লিটার ১,৩০০ টাকা করে।