বর্ধিত অধিবেশনের মোড়কে শুদ্ধিকরণের পথে রাজ্য সিপিএম

CPIM TRIPURAনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ মার্চ৷৷ রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনের মোড়কে মূলত শুদ্ধিকরণের পথে হাটছে সিপিএম৷ কলকাতা প্লেনামে সাংগঠনিক দূর্বলতা নিয়ে যে বিশ্লেষণ হয়েছে তার নিরিখে রাজ্যে দলীয় নেতা কর্মীদের বিপ্লবী চিন্তাধারায় শান দিতে চাইছে মেলারমাঠ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে শনিবার থেকে নজরুল কলাক্ষেত্রে সিপিএম রাজ্য কমিটির দুই দিনের বর্ধিত অধিবেশনে শ’চারেক প্রতিনিধিদের মগজ ধোলাই করা হবে৷ এডিসির দুটি নির্বাচন, প্রতাপগড়, সুরমা ও অমরপুরে উপ নির্বাচনে দলের ফলাফল মেলারমাঠের শীর্ষ নেতৃত্বদের চিন্তায় ফেলেছে৷ জয়ী হওয়া সত্বেও সাংগঠনিক দূর্বলতাকে কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারছেন না দলের কর্তারা৷ মেলারমাঠ সূত্রে খবর, শনিবার ও রবিবার রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনে দলীয় নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের বিপ্লবী চিন্তাধারা থেকে বিচ্যুত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে৷
ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া অমরপুরে মনোরঞ্জন আচার্য্য কান্ড মেলারমাঠকে বিশেষভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে৷ সূত্রের খবর, এই ইস্যুতে দলের অন্দরে বিভাজনও দেখা দিয়েছে৷ এছাড়া বঙ্গ ব্রিগেডের কংগ্রেসের সাথে মিতালী তৈরীর একতরফা মনোভাব নিয়েও রাজ্য কমিটির নেতৃত্ব চিন্তায় রয়েছেন৷ সিপিএম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সূরে সূর মিলিয়ে ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর পশ্চিমবঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে সওয়াল করেছেন৷ কিন্তু, তাতে জোটের প্রশ্ণে মতানৈক্য থাকছেই৷ কারণ, তৃণমূল কংগ্রেসকে মোকাবেলায় কংগ্রেসের হাত ধরতে গিয়ে প্রার্থী ঘোষণায় মতবিরোধ চরমে উঠেছে৷ আসন সমঝোতার প্রশ্ণে বামেদের প্রার্থী ঘোষণায় এখন বঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্বরা চটে লাল৷ বঙ্গে কংগ্রেস ও বামেদের নির্বাচনী সমিকরণ কার্য্যত ভেস্তে গিয়েছে৷ ফলে মনোরঞ্জন ইস্যুতে দলের ইমেজ উদ্ধার এবং পশ্চিমবঙ্গে দলীয় নেতৃত্বদের সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে রাজ্যে যাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হয় সেই বিষয়টিও অধিবেশনে আলোচনা হবে৷
দুই দিনের এই বর্ধিত অধিবেশনে পার্টির রাজনৈতিক লাইন নিয়েও আলোচনা প্রাধান্য পাবে৷ তবে রাজ্যে সংগঠন আরও মজবুত করার লক্ষ্যে কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে৷ মেলারমাঠ সূত্রে খবর, রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ক্রমাগত দূর্বল হয়ে পড়ায় চিন্তিত সিপিএম৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের ব্যাখ্যা অনুসারে কংগ্রেসের অধিকাংশ ভোটাররা বিজেপি শিবিরের দিকে ঝুকছে৷ কট্টর বাম বিরোধী কংগ্রেস সমর্থকরা আস্থা হারিয়ে বিজেপির প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন৷ তাতে মেলারমাঠ আরও গভীরভাবে উদ্বিগ্ণ৷ বর্ধিত অধিবেশনে এই ইস্যুতেও আলোচনা হবে বলে সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে৷ বিজেপি’র উত্থানে চিন্তিত সিপিএম রাজ্যে দূর্গ অটুট রাখতে সবরকম রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করতে উদ্যোগী হতে চাইছে৷ সেই লক্ষ্যে দলীয় কর্মী সমর্থকদের আরও গভীরে গিয়ে মগজ ধোলাই করতে হবে, সেই পথ অনুসন্ধান করা হবে অধিবেশনে৷
সূত্রের খবর, গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন নেতা কর্মীকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা গিয়েছে ঐসব নেতা কর্মীর মধ্যে চারিত্রিক স্খলন ও সংগঠন বিরোধী কাজকর্মের প্রবণতা৷ শুদ্ধিকরণের প্রশ্ণে এখন রাজ্যে দলের মূল লক্ষ্য নেতা কর্মীদের গঠনতন্ত্রের আদর্শে পুনরায় দিক্ষীত করা৷ দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকার ফলে নেতা কর্মীদের মধ্যে যে অহংবোধ তৈরী হয়েছে, তা দলের শীর্ষ নেতৃত্বরা উপলব্ধি করতে পারছেন৷ এবং প্রতিনিয়তই দলকে পিছনে টানছে এই অহংবোধ সেকথাও অকপটে মেনে নিয়েই দলকে পুনরুজ্জীবিত করার পথে হাটছে সিপিএম৷