তৃতীয় নেত্র দিয়ে শিক্ষকদের দেখতে হবে পড়ুয়াদের সুপ্ত গুনাবলী, বার্তা উপাচার্যর

কলকাতা, ১৭ ডিসেম্বর (হি. স.) : “ত্রিনয়নীর মত শিক্ষকদের তৃতীয় নেত্রকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। ওই চোখ দিয়ে খুঁজতে হবে আপাত অদেখা জিনিস। আবিস্কার করতে হবে পড়ুয়াদের সুপ্ত গুনাবলী।”

নয়া শিক্ষানীতি-সম্পর্কিত দুদিনের সর্বভারতীয় আলোচনায় শনিবার এই মন্তব্য করলেন কলকাতার বাবা সাহেব অম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটির (বিএসএইইউ, পূর্বতন দি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টিচার্স ট্রেনিং, এডুকেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন) এবং ডায়মন্ডহারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিএসএইইউ-এর ডেভিড হেয়ার ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানের বিদায়কালীন শুভকামনা (ভ্যালিডেক্টরি) জানাতে গিয়ে সভাপতির ভাষণে উপাচার্য বলেন, নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য পড়াশোনাটা সামগ্রিক এবং আনন্দদায়ক (হোলিস্টিক, এনজয়েবল) করা। এই মহান পেশায় দূরদৃষ্টি দিয়ে পড়ুয়াদের প্রত্যেককে বুঝতে হবে। পিছনের সারির পড়ুয়াকে উপেক্ষা করলে চলবে না। হয়ত তাঁর মধ্যেও আঁকা, গান বা কোনও সুকুমার কলায় বুৎপত্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের বিকশিত করতে হবে। অনুপ্রানিত করতে হবে। এই ত্রিনয়নের সাফল্যই শিক্ষককে চিন্তানায়ক (থট লিডার) করে তুলতে পারে।

সোমা দেবী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন বহু বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি পড়ানো হচ্ছে। কিভাবে জাতীয় শিক্ষানীতির রূপায়ণ হবে, কতটা হবে— সেসব আগের চেয়ে অনেক স্পষ্ট হয়েছে। নীতি আছে, তার রূপায়ণ আছে, সিলেবাস আছে। কিন্তু আসল লক্ষ্য কি সিলেবাস শেষ করা? জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষককে বসতে হবে চালকের আসনে। জ্ঞান, ব্যবস্থাপনা (নলেজ, ম্যানেজমেন্ট) এগুলো জ্বালানির কাজ করবে।

শিক্ষকদের উদ্দেশে ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সারা আকাশ আপনাদের। মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়তে পারেন। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দর সেই বাণী মনে রাখতে পারলে ভাল— “উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোধত”। আজ বুঝি তা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। গবেষণা হল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ। সমাজের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের যোগসূত্র এটা। এর সঙ্গে মনে রাখতে হবে জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণে স্থানীয় বিভিন্ন চাহিদাকেও পরিসর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে কেন্দ্রীয় হিন্দি শিক্ষণ মণ্ডলের সহ-সভাপতি ডঃ অনিল শর্মা জোশী বলেন, নিছক পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে আবদ্ধ থাকলে চলবে না। প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করতে হবে। জোর দিতে হবে নিজের ভাষা, সংস্কৃতির ওপর।“ ভারতীয় গুরুকূল-এর ঐতিহ্য, গুরু-শিষ্য পরম্পরার কথা উল্লেখ করে শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “লক্ষ লক্ষ লোকের মনে যদি আপনি থেকে যেতে পারেন, তবেই আপনার শিক্ষকতা সার্থক।“

আগ্রার কেন্দ্রীয় হিন্দি সংস্থান পরিচালক, বিশিষ্ট বক্তা, লেখক ও অধ্যাপক ডঃ বীনা শর্মা বলেন, “কে বলল, আজ এই আলোচনাচক্র শেষ হল? বরং বলা যেতে পারে পথ চলা শুরু হল। এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা বাবা সাহেব অম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আমরা আরও পথে এগোব।”

একাধিক প্রচারমাধ্যমের নিয়ন্ত্রক, প্রবীন সাংবাদিক ডঃ বিশ্বম্ভর নেওয়ার জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষকের কী ভূমিকা হওয়া উচিত, তাঁর অনুভবের কথা বলেন। বলেন, “দূরদৃষ্টিটাই মুখ্য। অতীতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেপথ্যনায়ক সেই অর্থে তকমাধারী শিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু তাঁদের দৃষ্টিটাই ছিল মুখ্য। অতিমারীতে যেসব শিক্ষক অন্তরালে থেকে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাই।“

অনুষ্ঠানের পরিচালক-সঞ্চালক অধ্যাপক ডঃ মৃণাল মুখার্জি বলেন, দু’দিনে টেকনিক্যাল সেশনে প্রায় ৭৫টি পত্র পেয়েছি। এর মধ্যে কিছু পত্রের মান সত্যি ভাল। সর্বভারতীয় এরকম একটা অনুষ্ঠান কার্যত ৬-৭ দিনে করা সম্ভব হল। সহযোগীদের পূর্ণ সহযোগিতা না পেলে এটা সম্ভব হত না। মঞ্চে তাঁদের অনেককে শংসাপত্র দেওয়া হয়। এ ছাড়াও শংসাপত্র দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের অনেককে।

শনিবার আলোচনার দ্বিতীয় দিনে পূর্ণ অধিবেশনে (প্লেনারি শেসন) ছিলেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপক বিজয় ভারতী, ভুবনেশ্বরের এনসিইআরটি-র অধ্যাপক বি এন পাণ্ডা, নয়াদিল্লির এনসিইআরটি-র অধ্যাপক শরদ সিনহা, শিলংয়ের এনসিইআরটি-র অধ্যাপক ডঃ আনন্দ বাল্মিকী। ‘টেকনিক্যাল সেশনে’ ছিলেন মালদা গৌড় বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ দেবব্রত দেবনাথ, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ অজিত মণ্ডল, বিএসএইইউ-এর তিন অধ্যাপক ডঃ কৌস্তভ ভট্টাচার্য, ডঃ মন্দিরা ঘোষ ও ডঃ রাজীব সাহা, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ রেশমা খাতুন প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক জাহুরুল হক। পরিবেশিত হয় নাটিকা ‘এণ্ড গেম’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *