অবৈধভাবে আগর রপ্তানির পথ বন্ধ করে আড়াই হাজার কোটি টাকার অর্থনীতির সুযোগ নেওয়া হোক, সংসদে সোচ্চার বিপ্লব 

আগরতলা, ১৬ ডিসেম্বর (হি. স.) : অবৈধভাবে আগর রপ্তানির পথ বন্ধ করে আড়াই হাজার কোটি টাকার অর্থনীতির সুযোগ নেওয়া হোক। আজ শুক্রবার সংসদে আগর শিল্পের বিকাশ শীর্ষক বেসরকারি প্রস্তাব এনে এই দাবিতে সরব হয়েছেন সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব। তাঁর কথায়, আগর রপ্তানির অনুমোদন মিলেছে ১০ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু, আইনী জটিলতার কারণে ১ গ্রাম আগর এখন পর্যন্ত ত্রিপুরা থেকে রপ্তানি সম্ভব হয়নি। আগর রপ্তানিতে আইনী প্রক্রিয়ায় সরলিকরণে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সংসদে বেসরকারি প্রস্তাব এনে ত্রিপুরার বিপুল সম্ভবনাময় আগর শিল্পের বিকাশ এবং তার যথার্থ বাণিজ্যিকীকরণের সুযোগ সম্প্রসারনের দাবি উত্থাপণ করেন সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব। এই প্রথম ত্রিপুরার সাংসদের আনীত বেসরকারি প্রস্তাবের উপর রাজ্যসভার অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় অধিকাংশ সময় আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পিয়ুষ গোয়েল সহ অসম, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট সহ বিভিন্ন রাজ্যের বেশ কয়েকজন সাংসদ বিপ্লব কুমার দেবের এই প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রেখেছেন। বিরোধী দলের সাংসদরাও এই প্রস্তাবের সমর্থন জানিয়েছেন।

এদিন আলোচনায় বিপ্লব কুমার দেব বলেন, ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নয়া দিশা দেখাবে আগর। তাই, রাবার ও টি বোর্ডের মতো আগর বোর্ড গঠন করে আগর শিল্পের সামগ্রীক বিকাশের জন্য দাবি জানান তিনি। সাথে তিনি পর্যাপ্ত গবেষণা, উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিজ্ঞানসম্মত সহায়তা, উৎপাদক ও নতুন উদ্যোগীদের উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি রেখেছেন। 

তাঁর বক্তব্য, ২০২১ সালের ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাৎ করে ত্রিপুরার বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় আগরজাত সম্পদের বাণিজ্যিক রপ্তানির দাবি জানিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীও তার গুরুত্ব অনুভব করেন এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর নির্দেশক্রমে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পিয়ুষ গোয়েল ও বন মন্ত্রী ভুপেন যাদবের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রথম বারের মত ২৫ হাজার মেট্রিকটন আগর রপ্তানির অনুমোদন মিলেছিল। প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কালীন সময়েই বিপ্লব কুমার দেবের হাত ধরে গত ২১ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরা আগর পলিসি-২০২১ সূচনা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এই মর্মে পত্র যোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর গত ৩ জানুয়ারি আগরের বাণিজ্যিক রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু, এখনো পর্যন্ত আইনি জটিলতা ও নানান অজুহাতে এক গ্রাম আগরও ত্রিপুরা থেকে রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি।

তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, অসাধু চক্রের প্রতিবন্ধকতা তৈরীর কারণেই ত্রিপুরা থেকে আগর রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। তাই, ভারত সরকার দ্বারা একটি বিশেষ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে অনুমোদন পাওয়ার পরেও কেন আগর রপ্তানিতে বাঁধা আসছে  সেই বিষয়টি চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানের জোরালো দাবি জানান তিনি।

শ্রী দেব বলেন, বিগত দিনে নানা অসাধু উপায়ে আগরকে কেন্দ্র করে ব্যক্তি স্বার্থ লাভালাভের জন্য বৈধ পথে আগরের বাণিজ্যিক রপ্তানি প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপে জটিলতা তৈরী করে রাখা হয়েছিল। ফলে ভারত সরকারের কোনো লাভ পেতো না। তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকারের সময়ে অন্যান্য দেশগুলি থেকে আগর আমদানি করে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিক্রির সুযোগ থাকলেও, নিজের দেশের আগর রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য আইনি বাঁধা তৈরী করে রাখা হয়েছিল।

তাঁর দাবি, গোটা দেশে আগর রপ্তানির মাধ্যমে ন্যূনতম ৫ হাজার কোটির অর্থনীতির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ত্রিপুরা, অসম ও কর্ণাটক থেকে আগামী কয়েক বছরে আগর নির্ভর ২ থেকে ২.৫ হাজার কোটির অর্থনীতির সম্ভাবনা রয়েছে।

তাঁর সাফ কথা, সুগন্ধি, ঔষধী গুনাগুন সহ আগর গাছ থেকে প্রাপ্ত প্রায় প্রতিটি অংশেরই পৃথক পৃথক চাহিদা ও উচ্চ মূল্য রয়েছে। প্রকৃতিক উপায়ে পরিণত ও সংগৃহীত আগর তেল লিটার প্রতি সর্বোচ্চ প্রায় ৭০-৭৫ লক্ষ ও অন্যান্য উপায়ে প্রাপ্ত তেলের বাজার মূল্য প্রায় ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ পরিণত আগর গাছ রয়েছে। থাইল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নতশীল দেশে এই আগর এবং আগরজাত বিভিন্ন দ্রব্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে।তাঁর মতে, আগর গাছ থেকে প্রাপ্ত তেল তরল সোনার ন্যায় দুর্মূল্য। উত্তর পূর্বাঞ্চল সহ ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের প্রশ্নে শীঘ্রই আগর রপ্তানিতে আইনি জটিলতা শিথিল করা হোক, জোর গলায় দাবি জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *