‘হিতেশ্বর শইকিয়ার শাসনামলে বিদ্যাৰ্থী পরিষদের কাৰ্যসূচিতে এসে মার খেয়েছিলাম, আজ এই রাজ্যে দু-দুবার ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি’‘বিজেপির কার্যালয় কেবল ইট-পাথর-সিমেন্টে তৈরি একটি ভবন নয়, দলের মন্দির’
গুয়াহাটি, ৮ অক্টোবর (হি.স.) : বছরের পর বছর উত্তরপূর্বকে হিংসা ও সন্ত্রাসজর্জরিত, আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল, নানা অরাজকতার অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলেছিল কংগ্রেস। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় এসে এই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ শনিবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে সঙ্গে নিয়ে গুয়াহাটির বশিষ্ঠ চারালিতে বিজেপির নতুন প্রদেশ দফতর অটলবিহারী বাজপেয়ী ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করে উদাত্ত ভাষণ দিচ্ছিলেন অমিত শাহ। প্রদত্ত ভাষণে অমিত শাহ বলেন, আজ তিনি এই কার্যক্রমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আসেননি, এসেছেন দলের একজন কার্যকর্তা হিসেবে। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত অত্যাধুনিক কার্যালয়কে কেবল ইট-পাথর-সিমেন্টে তৈরি একটি ভবন বা অট্টালিকা না ভেবে একে দলের মন্দির হিসেবে গণ্য করতে উপস্থিত দলীয় পদাধিকারী, কার্যকর্তা এবং সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলেন, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়, ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীর আদর্শে ভরপুর এই মন্দির বিজেপির রাষ্ট্রবাদী, ভারতীয় সংস্কৃতির ভাবনাস্থল। এই মন্দির থেকে রাষ্ট্রের হিতে অনুপ্রেরণা নিয়ে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দলের কাজ সম্প্রসারিত হবে।
কংগ্রেস আমলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতির বীভৎস বর্ণনাও দিয়েছেন অমিত। তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্ৰী হিতেশ্বর শইকিয়া নেতৃত্বাধীন কংগ্ৰেস আমলে সংগঠিত একটি ঘটনার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰী শাহ বলেন, হিতেশ্বর শইকিয়ার শাসনামলে তিনি বিদ্যাৰ্থী পরিষদের এক কাৰ্যসূচির জন্য এখানে এসেছিলেন। তখন হিতেশ্বর শইকিয়ারা তাঁদের মারপিট করেছিলেন। মার খেয়ে তাঁরা স্লোগান তুলেছিলেন “অসমের গলিয়া সুনি হ্যায়, ইন্দিরা গান্ধী খুনি হ্যায়…’। সেদিন কি কেউ কল্পনা করেছিল, এই রাজ্যে দু-দুবার বিজেপি ক্ষমতায় আসবে?”কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অসমে কংগ্রেস বহু বছর ধরে সন্ত্রাস, বিভাজন, আন্দোলন ও ধর্মঘটের স্থল হিসেবে গড়ে তুলেছিল। উন্নয়ন ছিল না, শিক্ষা ছিল না, শান্তি ছিল না। আজ আমি আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই, ২০১৪ সাল থেকে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল দ্ৰুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। অমিত শাহ বলেন, উত্তরপূর্বে বিজেপি সমান্তরালভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। আমরা অসমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি। কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে অমিত শাহ বলেন, কংগ্রেসের সত্তর বছর উত্তরপূর্বকে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর অধীনে আট বছরের বিজেপি সরকার মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উত্তরপূর্ব। ইতিমধ্যে অসমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ৯,০০০ সশস্ত্র উগ্রপন্থী সদস্য অস্ত্র সংবরণ করেছে এই বিজেপি সরকারের আমলেই, বলেন শাহ।বলেন, ২০১৯ সালে নিৰ্বাচনের আগে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় আসলে উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আফসপা অপসারণ করা হবে। ওই প্রতিশ্রুতিতে ছিল তার তোষণের জাল। এ ব্যাপারে আমাকে যখন প্রশ্ন করা হল, আমি বলেছিলাম, আমরা প্রথমে উত্তর-পূর্বোঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনব, তার পর আফস্পা প্রত্যাহার করব। অবশেষ আমরা নির্বাচনে জিতেছি। এবং আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির ৮০ শতাংশ এলাকা থেকে আফসপা প্রত্যাহার করা হয়েছে।তিনি বলেন, কংগ্রেস কোনও চিন্তাশীল দল নয়। আমাদের দল বিজেপি রাষ্ট্রবাদী চিন্তাশীল দল। এই দল আজকের দিনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। আমাদের দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আজ ৭০ হাজার মানুষ বিজেপির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে যোগ দিয়েছেন। আজকের এই অনুষ্ঠানে ১৯৭০ থেকে আজ পর্যন্ত জীবিত ও প্রয়াত সকল আদি বিজেপি কার্যকর্তাদের শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করেছেন অমিত শাহ। স্মরণ করেছেন অসম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজেপির প্রথম ধ্বজাধারী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, লক্ষেশ্বর গোহাঁই প্রমুখদের।অতিমারি করোনাকালে ২০১৯ সালে তিনি যখন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তখন বশিষ্ঠ এলাকায় এক লক্ষ বর্গফুট এলাকাজুড়ে এই কার্যালয় ভবনের শিলান্যাস করেছিলেন অমিত শাহ। অতি কমদিনের মধ্যে অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত নবনির্মিত ছয়তল বিশিষ্ট ভবনের উদ্ঘাটন করে আজ তিনি খুব আনন্দিত। নতুন কার্যালয়ে রয়েছে একটি গেস্ট হাউস, একটি আধুনিক মিডিয়া সেন্টার, ৩৫০ আসন বিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহ, পাঁচটি সভাগৃহ আইটি সেল, ক্যান্টিন ইত্যাদি। জানা গেছে, দলীয় কার্যকর্তাদের অনুদানে তৈরি করা হয়েছে হাইটেক প্রদেশ সদর দফতর।হিন্দুস্থান সমাচার / সমীপ / অরবিন্দ