বকো (অসম), ১৪ জুলাই (হি.স.) : অসম-মেঘালয় সীমা-বিরোধ নিরসনে উভয় রাজ্যের সীমান্ত জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয়দের নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি শান্তি কমিটি৷ বকো (অসম) আপার তারাবাড়ি গ্রামে উভয় রাজ্যের সীমান্তবাসীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় এই শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার আপার তারাবাড়ি গ্রামের প্রধান পিটডন সাংমা জানান, সোমবার (১১ জুলাই) রাতে মেঘালয়ের কতিপয় বসিন্দা হাতে হাতে দা-লাঠি নিয়ে আন্তঃরাজ্য সীমার এ-পারে এসে অসমের নাগরিকদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে প্রতি পরিবারের কাছে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছিল। এতে অসমের নাগরিক বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও শিশু সহ গারো উপজাতির প্রায় ১৫০ জন আতঙ্কে আপার তারাবাড়ি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। বিভিন্ন স্থানে তিনি তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
গ্রামপ্রধান পিটডন সাংমা জানান, বুধবার বকো রেভিনিউ সার্কল অফিসার দিবস বরদলৈ, বকো থানার ওসি ফণীন্দ্র নাথ, হাহিম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিক্রম বসুমতারি, মেঘালয়ের পশ্চিম খাসিহিলস জেলা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর গোয়ালন কে সাংমা এবং স্থানীয় অল রাভা স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলকে নিয়ে উভয় রাজ্যের সাধারণ ও পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিক, সিআরপিএফ-এর স্থানীয় শীর্ষ অফিসারদের নিয়ে আপার তারাবাড়ি গ্রামের খেলার মাঠে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেঘালয় পুলিশের জনৈক পদস্থ আধিকারিক গোয়ালন কে সাংমার পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত সবাইকে শান্তি বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছেন উপস্থিত সকলে। মেঘালয় এবং অসমের পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের আধিকারিকরা বৈঠকের আগে করমর্দন করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভবিষ্যতে যদি কোনও সীমান্ত সমস্যা দেখা দেয় তবে উভয় রাজ্যের প্রশাসন সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। ওই সভায় এলাকায় শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে অসম ও মেঘালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী ছয় সদস্যের একটি শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা সবাই আপার তারাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা।
তিনি জানান, দুই রাজ্য প্রশাসনের ডাকে ছোট ছোট ট্রাকে ও পায়ে হেঁটে ১০ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে মানুষ আপার তারাবাড়ি গ্রামের মাঠে পৌঁছে। সভায় আপার তারাবাড়ি এলাকার ওয়াটেরে রংচং, বালস্রিক ও ওয়াকাম থেকে মানুষ সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বকো রেভিনিউ সার্কল অফিসার দিবস বরদলৈ জানিয়েছেন, অসম ও মেঘালয় উভয় সরকারের তত্ত্বাবধানে আপার তারাবাড়ি এলাকার সীমান্ত-সম্পর্কিত সমস্যাগুলি গঠিত শান্তি কমিটি তদারকি করে সময় সময় দুই রাজ্যের প্রশাসনকে অবগত করবে৷ তিনি জানান, লুইন মারাককে সভাপতি এবং রোটাল সাংমাকে সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে মারজান সাংমা, লিংবাট মারাক, বার্মিন্টন সাংমা এবং ক্রাইসন মারাককে সদস্য মনোনীত করে ছয়জনের শান্তি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এক জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, ভূমি আইন অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা সরকার চালিয়েছে। শীঘ্রই সীমা-বিবাদের নিষ্পত্তি হবে বলে আশাবাদী তিনি।
এদিকে বকো থানার ওসি ফণীন্দ্র নাথ জানান, সপ্তাহখানেক আগে মেঘালয়ের কতিপয় বাসিন্দা অসমের নাগরিকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেছিল। ওই ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য অসম পুলিশের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।