গুয়াহাটি, ১৭ মে (হি.স.) : প্রকৃতির তাণ্ডবে বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব রাজ্য। এর মধ্যে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসম। বন্যা ও ভূমিধসের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে বহু রেল ও সকড়পথের সেতু বিলীন হয়ে গেছে। নিখোঁজ শিশু সহ তিনজন। এঁরা সকলেই কাছাড় জেলার বাসিন্দা। গতকাল রাত পর্যন্ত রাজ্যের সাতটি জেলা বন্যার কবলে পড়েছে বলে খবর। আজ মঙ্গলবার এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। লামডিং-বদরপুর পাহাড় লাইনের প্রায় ৫০টি স্থানে পাহাড়ের মাটি ও পাথর খসে পড়ে ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগরে ধসের কবলে পড়েছে একটি বসতবাড়ি। ওই বাড়ির এক বালক ও মহিলা সহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মেঘালয়ের ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের সোনাপুর থেকে রাতাছড়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ধস পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। রেল ও সড়কপথ বন্ধ হওয়ায় বরাক উপত্যকার তিন জেলা, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং মণিপুরের একটি অঞ্চলের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ চূড়ান্ত বিপাকে পড়েছেন।
সংহারী রূপ ধারণ করেছে অসমের অকাল বন্যা পরিস্থিতি। গতকাল রাত পর্যন্ত ছয়টি জেলার ১৫টি রাজস্ব সার্কল বন্যাক্রান্ত ছিল। কিন্তু রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে বন্যাক্রান্ত জেলার সংখ্যা আজ আরও বাড়েতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। নদ-নদী ও উপনদীগুলির জলস্তর হু হু করে বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রাজ্য দুৰ্যোগ ব্যবস্থাপনা কৰ্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রাজ্যের ছয়টি জেলা যথাক্রমে কাছাড়, ধেমাজি, হোজাই, কামরূপ মেট্রো, কারবি আংলং পশ্চিম, নগাঁও এবং নলবাড়ি। এর মধ্যে কাছাড়ের রাজস্ব সার্কল উধারবন্দ, লক্ষ্মীপুর, সোনাই, শিলচর এবং কাটিগড়ার পরিস্থিতি ভয়াবহ। হোজাই সার্কলের লংকা, হোজাই এবং ডবকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলের নীচে। নগাঁও জেলার কামপুর ও রহা এবং নলবাড়ি জেলার নলবাড়ি ও ঘগ্রপাড় সার্কলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার জলে ভাসছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, কাছাড়ের ১৩৮, ধেমাজির দুই, হোজাইয়ের ৩৪, নগাঁওয়ের ৩৯ এবং নলবাড়ির চারটি গ্রাম বন্যার জলে প্লাবিত। এছাড়া বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা যাথাক্রমে কাছাড়ে পুরুষ ১৬,৪৫১, মহিলা ১২,৩৯৯ এবং শিশু ১২,১৮৭ সহ মোট ৪১,০৩৭ জন। এভাবে ধেমাজিতে মোট ৬৪৪, হোজাইয়ে ১৩,৫২৩, কারবি আংলং পশ্চিমে ১,৪৪৬ এবং নগাঁও জেলায় ১৯ জন।
এছাড়া বন্যার কবলে পড়ে এই সব জেলার মোট ২,০৯৯.৬ হেক্টর কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া হোজাই ও নগাঁও জেলায় মোট প্ৰায় ১,৪৩৪টি পশুসম্পদের ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, বিভিন্ন প্রান্তে ভয়াবহ নদীভাঙনের শিকার হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। নদী গহ্বরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটে, স্কুলবাড়ি, বাজারহাট-দোকানপাট ইত্যাদি। ভুক্তভোগী জনতা পরিবার পরিজন নিয়ে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছেন। তবে বন্যাক্ৰান্ত জেলাগুলিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোট ৪,৩৩০টি ত্ৰাণশিবির খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কাছাড়ে ১,৬৮৫, হোজাইয়ে ২,৩৭০, কারবি আংলং পশ্চিম জেলায় মোট ২৭৫টি।