রাষ্ট্র প্রেরণা স্থলের উদ্বোধনে কংগ্রেস–এসপিকে তোপ মোদীর, ‘এক পরিবারে দেশ বাঁধার রাজনীতির’ অভিযোগ

লখনউ, ২৫ ডিসেম্বর : প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ১০১তম জন্মবার্ষিকীতে লখনউয়ে ‘রাষ্ট্র প্রেরণা স্থল’-এর উদ্বোধন করে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির (এসপি) বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি অভিযোগ করেন, এই দুই দলই বাবাসাহেব আম্বেদকরসহ দেশের মহান ব্যক্তিত্বদের উত্তরাধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে এবং দেশে ‘এক পরিবারের শাসন’ কায়েম করতে চেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার পর দেশে এমন এক প্রবণতা তৈরি হয়েছিল, যেখানে ভারতের সমস্ত ভালো কাজকেই একটি পরিবারের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। বই, সরকারি প্রকল্প, প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, মোড়—সবকিছুই একটি পরিবারের গৌরবের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।”

মোদী দাবি করেন, বিজেপি দেশকে এই পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির বেড়াজাল থেকে মুক্ত করেছে। তাঁর কথায়, “আমাদের সরকার মা ভারতীর সেবায় নিবেদিত। আমরা প্রতিটি মানুষের অবদানকে সম্মান দিচ্ছি। আজ দিল্লির কর্তব্যপথে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু বাবাসাহেব আম্বেদকরের উত্তরাধিকার কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল, তা কেউ ভুলতে পারে না।”

কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির ভূমিকার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দিল্লিতে কংগ্রেসের রাজপরিবার এই পাপ করেছে, আর উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টিও একই অপরাধ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “কিন্তু বিজেপি বাবাসাহেবের উত্তরাধিকার ধ্বংস হতে দেয়নি। আজ দিল্লি থেকে লন্ডন পর্যন্ত বাবাসাহেব আম্বেদকরের পঞ্চতীর্থ তাঁর অবদানকে স্মরণ করছে।”

উল্লেখ্য, বাবাসাহেব আম্বেদকরের পঞ্চতীর্থের মধ্যে রয়েছে—মধ্যপ্রদেশের মহৌতে জন্মভূমি, লন্ডনের শিক্ষা ভূমি, নাগপুরের দীক্ষা ভূমি, দিল্লির মহাপরিনির্বাণ স্থল এবং মুম্বইয়ের চৈত্যভূমি।

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ‘রাষ্ট্র প্রেরণা স্থল’-এর রূপান্তরের কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, যে জমিতে এই স্মৃতিসৌধ গড়ে উঠেছে, সেখানে কয়েক দশক ধরে প্রায় ৩০ একর জুড়ে আবর্জনার স্তূপ ছিল। গত তিন বছরে সেই এলাকা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, কারিগর ও পরিকল্পনাবিদদের অভিনন্দন জানান।

রাষ্ট্র প্রেরণা স্থলে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় এবং অটলবিহারী বাজপেয়ীর ৬৫ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিই জম্মু ও কাশ্মীরে দুই সংবিধান, দুই পতাকা ও দুই প্রধানের ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন। অনুচ্ছেদ ৩৭০ তুলে দিয়ে সেই প্রাচীর ভাঙার সুযোগ পেয়েছে বিজেপি সরকার।”

উত্তরপ্রদেশের অর্থনৈতিক ও শিল্পোন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ‘ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট, ওয়ান প্রোডাক্ট’ প্রকল্পের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই উদ্যোগ ছোট শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশে প্রতিরক্ষা করিডর গড়ে তোলা হচ্ছে এবং লখনউয়ে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মোদী বলেন, “যে দিন দূরে নয়, উত্তরপ্রদেশের প্রতিরক্ষা করিডর বিশ্বজুড়ে পরিচিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের অন্ত্যোদয়ের স্বপ্ন—শেষ সারির মানুষের মুখে হাসি ফোটানো—এই সরকার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়েছে।”

অটলবিহারী বাজপেয়ীর অবদান স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের আমলেই ভারতের ডিজিটাল বিপ্লবের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল। আধার কার্ডের সূচনা, টেলিকম নীতির সংস্কার এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবার বিস্তার সেই সময়েই শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আজ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী দেশ। আর উত্তরপ্রদেশ, যেখান থেকে অটলজি সাংসদ ছিলেন, এখন দেশের এক নম্বর মোবাইল উৎপাদনকারী রাজ্য।”

উল্লেখ্য, প্রায় ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫ একর জমির উপর নির্মিত রাষ্ট্র প্রেরণা স্থল একটি জাতীয় স্মারক ও অনুপ্রেরণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে পদ্মাকৃতি আধুনিক জাদুঘরও রয়েছে, যেখানে উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় ও অটলবিহারী বাজপেয়ীর অবদান তুলে ধরা হয়েছে।

Leave a Reply