ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের রাজবাড়ি জেলায় চাঁদাবাজির অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম অমৃত মণ্ডল (৩০), ডাকনাম সম্রাট। এই ঘটনা ঘটল ময়মনসিংহে ব্লাসফেমির অভিযোগে ২৭ বছরের দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত প্রায় ১১টা নাগাদ গ্রামবাসীদের হামলার শিকার হন সম্রাট। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত প্রায় ২টো নাগাদ চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্রাটের এক সহযোগী মহম্মদ সেলিমকে আটক করা হয়েছে। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল ও একটি দেশি ওয়ান শুটার বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, সম্রাটের বিরুদ্ধে অন্তত দুটি মামলা ছিল, যার মধ্যে একটি খুনের মামলা। তিনি ‘সম্রাট বাহিনী’ নামে একটি স্থানীয় গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন এবং এলাকায় ভয় দেখিয়ে চাঁদা তুলতেন বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ভারতে থাকার পর সম্প্রতি এলাকায় ফিরে আসেন সম্রাট। অভিযোগ, তিনি নিয়মিত গ্রামবাসীদের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ‘অনুদান’ আদায় করতেন।
গ্রামবাসীদের দাবি, বুধবার রাতে সম্রাট ও তার কয়েকজন সহযোগী স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের বাড়িতে চাঁদা তুলতে যান। তখন পরিবার ‘ডাকাত’ বলে চিৎকার করলে গ্রামবাসীরা জড়ো হয়ে সম্রাটকে মারধর করে। তার সঙ্গীরা পালিয়ে গেলেও সেলিমকে অস্ত্রসহ ধরে ফেলে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের উঠে আসছে সাম্প্রতিক আরেকটি গণপিটুনির প্রসঙ্গ। ময়মনসিংহ জেলায় ব্লাসফেমির অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁকে মারধর করে গাছে বেঁধে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে দেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তথাকথিত ‘নতুন বাংলাদেশ’-এ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও গণহিংসার কোনও স্থান নেই এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক কর্মী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকেই বাংলাদেশজুড়ে অশান্তির আবহ তৈরি হয়েছে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, ভারতে ছত্তিশগড়ের রায়পুরে কথিত ধর্মান্তরণ-সংক্রান্ত হিংসার প্রতিবাদে ডাকা বনধের সময় ম্যাগনেটো মলে বড়দিনের সাজসজ্জা ভাঙচুরের ঘটনায়ও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ৩০–৪০ জনের একটি অজ্ঞাতপরিচয় দল এই ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ ও যানবাহনের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।

