সুলেখা দে হত্যাকান্ডে নিজ মেয়ে ও জামাতাকে আটক করল পুলিশ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ ডিসেম্বর: নতুন নগর সারদা পল্লি এলাকায় বৃদ্ধা সুলেখা দে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার নিজের মেয়ে ও জামাতাকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২১ ডিসেম্বর বিকেলে নতুন নগর সারদা পল্লি এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সুলেখা দে-কে।আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে জিবি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

পরবর্তী সময়ে পুলিশ সুলেখা দে-র বাড়িতে গিয়ে তদন্ত চালিয়ে ঘরের ভেতরে রক্তের চিহ্ন দেখতে পায়। এ সময় সুলেখা দে-র মেয়ে বুলটি দে পুলিশকে জানান, অজ্ঞাত পরিচিত দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে তার মায়ের মাথায় আঘাত করে এবং গলা থেকে একটি স্বর্ণের চেইন নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে তদন্তে পুলিশ দেখতে পায়, সুলেখা দে-র হাতে স্বর্ণের চুড়ি ও কানে কানের দুল অক্ষত রয়েছে। এতে পুলিশের সন্দেহ আরও গভীর হয়। এরই মধ্যে জিবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলেখা দে-র মৃত্যু হলে পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করে।

পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, সুলেখা দে দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার ছিলেন। তার মেয়ে বুলটি দে ও জামাতা বিষ্ণু দে প্রায়শই তাকে মারধর করতেন বলে অভিযোগ। তদন্তে আরও জানা যায়, ২১ ডিসেম্বর আড়াই লক্ষ টাকার একটি ফিক্সড ডিপোজিট অন্য ব্যক্তির নামে নমিনি করা হয়েছে—এই বিষয়টি নিয়ে তীব্র বচসার জেরে অভিযুক্তরা সুলেখা দে-কে মারধর করেন বলে অভিযোগ।

পুলিশের পক্ষ থেকে বুলটি দে ও বিষ্ণু দে-কে জোর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা স্বীকার করে যে, তারাই সুলেখা দে-কে মারধর করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পাশাপাশি তারা আরও জানায়, সুলেখা দে-র গলার স্বর্ণের চেইনটি তারা এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছিল।

এরপর পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে এবং তাদের দেখানো মতো স্থান থেকে স্বর্ণের চেইনটি উদ্ধার করে। মঙ্গলবার পশ্চিম আগরতলা থানায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গোটা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন সদর মহকুমার পুলিশ আধিকারিক।

পুলিশ ধৃত বুলটি দে ও বিষ্ণু দে-কে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে অভিযুক্তদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কারের লোভেই মেয়ে বুলটি দে ও তাঁর স্বামী বিষ্ণু দে সুলেখা দে-কে হত্যা করেছে। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

Leave a Reply