সম্বল, ২৩ ডিসেম্বর : নিখোঁজ ডায়েরি করে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন খোদ স্ত্রী। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। মরদেহের অবশিষ্টাংশে থাকা একটি ‘ট্যাটু’ এবং মোবাইলের একটি পুরনো ছবিই ধরিয়ে দিল খুনিদের। উত্তরপ্রদেশের সম্বল জেলায় স্বামী রাহুলকে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগে স্ত্রী রুবি এবং তাঁর প্রেমিক গৌরবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশি জেরায় রুবি স্বীকার করেছেন, গত ১৭ নভেম্বর রাতে তাঁর বাড়িতে প্রেমিক গৌরব এসেছিলেন। রাত ২টো নাগাদ আচমকাই স্বামী রাহুল বাড়ি ফিরে আসেন এবং দু’জনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। শুরু হয় তীব্র বচসা। সেই সময় রুবি একটি ভারী বস্তু দিয়ে রাহুলের মাথায় আঘাত করেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
খুন করার পর ধরা পড়ার ভয়ে শিউরে ওঠার মতো পরিকল্পনা করেন রুবি ও গৌরব। পরদিন একটি কাটার মেশিন নিয়ে আসেন গৌরব। সেই মেশিন দিয়ে রাহুলের দেহ থেকে মাথা ও হাত-পা আলাদা করে ফেলা হয়। এরপর বাজার থেকে দুটি বড় কালো ব্যাগ কিনে আনেন রুবি।
পুলিশ জানিয়েছে দেহের ছিন্ন মাথা ও হাত-পা একটি ব্যাগে ভরে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে রাজঘাটের কাছে গঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, বাকি ধড়টি (টরসো) অন্য একটি ব্যাগে ভরে স্থানীয় ইদগাহের পেছনে ফেলে রাখা হয়। ঘটনার সাত দিন পর, অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর রুবি নিজে থানায় গিয়ে স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার নাটক সাজিয়ে ডায়েরি করেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর পাত্রুয়া রোডের একটি ঝোপের পাশ থেকে পচাগলা একটি ধড় উদ্ধার করে পুলিশ। মাথা ও হাত-পা না থাকায় পরিচয় শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ফরেন্সিক পরীক্ষার সময় পুলিশের নজরে আসে মরদেহের হাতে খোদাই করা রাহুল নামটি। এরপরই পুলিশ নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা পরীক্ষা করে জানতে পারে, চুনী মহল্লা এলাকা থেকে জনৈক রাহুল নিখোঁজ।
সন্দেহ হওয়ায় স্ত্রী রুবিকে ডেকে পাঠায় চন্দৌসি কোতোয়ালি পুলিশ। প্রথমে তিনি দেহটি নিজের স্বামীর বলে অস্বীকার করেন। কিন্তু রুবির আচরণ ও কথায় অসঙ্গতি দেখে তাঁর মোবাইল ফোনটি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন তদন্তকারীরা।
রুবির ফোনের গ্যালারি চেক করতে গিয়ে পুলিশ একটি ছবি খুঁজে পায়, যেখানে রাহুলকে ঠিক সেই টি-শার্টটি পরে থাকতে দেখা যায়, যা উদ্ধার হওয়া দেহের সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল। এই অকাট্য প্রমাণের সামনে ভেঙে পড়েন রুবি এবং প্রেমিক গৌরবের সঙ্গে মিলে খুনের কথা কবুল করেন।
সম্বল পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে রক্তমাখা জামাকাপড় এবং দেহ কাটার মেশিনটি উদ্ধার করা হয়েছে। ধড়টি উদ্ধার হলেও গঙ্গার জলে ফেলে দেওয়া মাথা ও হাত-পার সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ধৃত রুবি ও গৌরবকে আদালতের নির্দেশে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

