গুয়াহাটি, ২০ ডিসেম্বর : আসামের হোজাই জেলায় শনিবার ভোরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সাইরাং–নয়া দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় একটি হাতির পাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ঘটনায় অন্তত ৭টি হাতির মৃত্যু হয়েছে এবং একটি হাতি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল ও বন দপ্তরের আধিকারিকরা। দুর্ঘটনায় লোকোমোটিভ সহ ট্রেনের ৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়। তবে যাত্রীদের মধ্যে কেউ হতাহত হননি।
রেল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ভোর আনুমানিক ২টা ১৭ মিনিট নাগাদ জামুনামুখ–কামপুর রেল সেকশনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। মিজোরামের সাইরাং (আইজলের কাছে) থেকে দিল্লির আনন্দ বিহার টার্মিনালগামী রাজধানী এক্সপ্রেস চলছিল। ট্রেনটি একটি হাতির পালের সামনে পড়ে যায়। লোকো পাইলট বিপদ বুঝে জরুরি ব্রেক কষলেও সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলটি কোনও নির্দিষ্ট ‘এলিফ্যান্ট করিডর’ নয়।
দুর্ঘটনার পর নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার ও লামডিং ডিভিশনের ডিআরএম সহ ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। ক্ষতিগ্রস্ত কোচের প্রায় ২০০ জন যাত্রীকে ট্রেনের অন্যান্য কোচের ফাঁকা বার্থে সাময়িকভাবে স্থানান্তর করা হয়। রেল জানিয়েছে, মোট ৬০০ জন যাত্রীই নিরাপদ রয়েছেন। ট্রেনটি গুয়াহাটিতে পৌঁছলে অতিরিক্ত কোচ জুড়ে যাত্রা স্বাভাবিক করা হবে।
নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের সিপিআরও কপিঞ্জল কিশোর শর্মা জানান, “লোকো পাইলটের দ্রুত সিদ্ধান্তের জন্য বড় ধরনের যাত্রী দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে।” তিনি আরও জানান, উদ্ধার ও লাইন পুনরুদ্ধারের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। বর্তমানে ওই রুটে এক লাইনে ট্রেন চলাচল হচ্ছে।
দুর্ঘটনার জেরে আপার আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশে রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, ৯টি ট্রেন বাতিল, ১৩টি ট্রেন নিয়ন্ত্রিত এবং ২টি ট্রেন সংক্ষিপ্ত রুটে চলাচল করছে। বাতিল হওয়া ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে রাঙ্গিয়া–নিউ তিনসুকিয়া এক্সপ্রেস, গুয়াহাটি–যোরহাট টাউন জন শতাব্দী এক্সপ্রেস, গুয়াহাটি–বাদরপুর ভিস্তাডোম এক্সপ্রেস প্রভৃতি।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশজুড়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ৭৯টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। সংসদে এই তথ্য জানিয়েছিলেন পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং। তিনি জানান, হাতি দুর্ঘটনা রুখতে রেল ও পরিবেশ মন্ত্রক যৌথভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন হাতির আবাসস্থলে গতি নিয়ন্ত্রণ, সেন্সর-ভিত্তিক সতর্কতা ব্যবস্থা, আন্ডারপাস ও বেড়া নির্মাণ ইত্যাদি।
এই ঘটনায় আবারও বন্যপ্রাণ সুরক্ষা ও রেল নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

