নয়াদিল্লি, ৫ ডিসেম্বর: সফরকারী রুশ প্রতিনিধি দলকে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার বলেন, তার সঙ্গে মোদীর “ঘনিষ্ঠ কর্মসম্পর্ক ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ” প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তারা একসঙ্গে রাশিয়া-ভারত সহযোগিতার সকল কৌশলগত ক্ষেত্রের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
হায়দরাবাদ হাউসে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের বৈঠক শেষে পুতিন বলেন, “আমাদের ভারতীয় সহকর্মীদের সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত আলোচনা, এবং গতরাতে মোদীজির সঙ্গে তার বাসভবনে একান্তে ডিনারের পর যে কথা হয়েছে যা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ তা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ভারত-রাশিয়া অংশীদারিত্বের চেতনাকে প্রতিফলিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ কাজের সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা এ বছর সেপ্টেম্বরে এসসিও সম্মেলনে সাক্ষাৎ করেছি, নিয়মিতভাবে ফোনে কথা বলি এবং আমাদের দুই দেশের কৌশলগত সহযোগিতার অগ্রগতি আমরা নিবিড়ভাবে লক্ষ্য রাখি।
দুই নেতার বৈঠকে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের সব দিক নিয়ে আলোচনা হয়, যা গভীর ও বহুমাত্রিক। উভয় নেতা বিশেষ ও বিশেষাধিকারপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও মতবিনিময় হয়।
পুতিন জানান, রাশিয়া ও ভারতের বহুমুখী সহযোগিতার সব দিক গভীরভাবে আলোচিত হয়েছে এবং জরুরি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যাগুলি নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে।
আমরা যে যৌথ বিবৃতি গ্রহণ করেছি, তাতে রাজনীতি, নিরাপত্তা, অর্থনীতি, বাণিজ্য, মানবিক বিষয় ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা আরও জোরদার করার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া একাধিক আন্তঃসরকারি ও কর্পোরেট চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে, বলেন পুতিন।
নেতারা বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা, সুরক্ষা, সমুদ্র সহযোগিতা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুরক্ষা, সার, অ্যাকাডেমিক বিনিময়, মিডিয়া সহযোগিতা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ—এসব ক্ষেত্রে বহু সমঝোতা স্মারক বিনিময় প্রত্যক্ষ করেন।
পুতিন জানান, গত বছর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১২ শতাংশ বেড়েছে, যা নতুন রেকর্ড। মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ৬৪–৬৫ বিলিয়ন ডলার। আশা করা যায় এ বছরও প্রায় একই থাকবে। তিনি বলেন, দুই দেশ চাইলে এই বাণিজ্যকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যে উন্নীত করতে পারে। এ উদ্দেশ্যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত রাশিয়া-ভারত অর্থনৈতিক সহযোগিতা উন্নয়ন কর্মসূচি নির্ধারিত হয়েছে।
পুতিন উল্লেখ করেন, দুই দেশ জাতীয় মুদ্রায় লেনদেনে নিয়মিত অগ্রসর হচ্ছে। এখন বাণিজ্যের ৯৬ শতাংশ এই মুদ্রায় সম্পন্ন হয়। রুশ অর্থনৈতিক অপারেটররা ভারতীয় রুপি আরও বেশি ব্যবহার করছে। বড় প্রকল্পগুলো রুশ রুবলেই অর্থায়ন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ভারতের জ্বালানি খাতে একটি বিশ্বস্ত সরবরাহকারী, এবং ভারতীয় অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য রাশিয়া প্রস্তুত।

