নয়া দিল্লি, ২৭ নভেম্বর : কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কর্ণাটক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমারকে শীঘ্রই দিল্লিতে তলব করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব এখন বিশ্বাস করছে যে, এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কারণ হাইকম্যান্ডের মধ্যেই এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের মূল এজেন্ডা হবে দুই নেতাকে নির্দেশ দেওয়া যাতে তারা নিজেদের শিবিরকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং যে ধরনের জনসমক্ষে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে তা অবিলম্বে বন্ধ করেন। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
একাধিক কংগ্রেস সূত্র জানায়, রাজ্যের শাসনব্যবস্থা এবং দলীয় অবস্থান ক্ষুণ্ন হচ্ছে, কারণ নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে খোলামেলা দাবিদাওয়া এবং চাপ প্রয়োগ করছেন। নেতৃত্বের তরফ থেকে দুশ্চিন্তা, যে অবস্থা পার্টির ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে, যা একটি জাতীয় দলের জন্য বড় বিপদ।
কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ অঙ্গনে একাধিক বৈঠক এবং আলোচনা চলছে, যেখানে সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমার দুজনেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে নিজ নিজ দাবী তুলে ধরছেন। তবে এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে রাহুল গান্ধীর হাতে।
সূত্রে জানা গেছে, কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ৬ জন সদস্যের মধ্যে সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা ডি.কে. শিবকুমারকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে ইচ্ছুক। তবে রাহুল গান্ধী এবং কেসি বেনুগোপাল সিদ্দারামাইয়াকে তার পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্বে রাখার পক্ষপাতী। এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কংগ্রেস সভাপতি মালিকার্জুন খড়গে, যিনি নিজে এই বিষয়ে একেবারে নিরপেক্ষ।
শিবকুমারের শিবির দাবি করছে, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে কোনো অস্থিরতা থাকলে, তা কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ক্ষতি করতে পারে। আবার, সিদ্দারামাইয়ার শিবির মনে করছে যে, শিবকুমারের পক্ষ থেকে যেভাবে জনসমক্ষে কথা বলা হচ্ছে তা দলীয় ঐক্য এবং নেতৃত্বের প্রতি খোলামেলা চ্যালেঞ্জ। তারা বলছেন, সিদ্দারামাইয়া সরকারের কাজের প্রতি কোনও ধরনের অবহেলা বা অপ্রতুলতা ছিল না, এমনকি দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে কোনোরকম পরিবর্তন করারও প্রয়োজন নেই।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে কর্ণাটক রাজ্যের নেতৃত্ব সংকট সমাধানের জন্য কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব রয়েছে। প্রথম বিকল্প অনুযায়ী, দুই শিবিরকেই তাদের সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হবে এবং জানুয়ারি মাসের আগে কোনো রদবদল বা মন্ত্রিসভার পুনর্গঠন করা হবে না। দ্বিতীয় বিকল্পে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত মার্চ মাসের বাজেট পরবর্তী সময়ে নেওয়া হবে। তৃতীয় বিকল্প অনুযায়ী, সিদ্দারামাইয়া শিবকুমারকে ২০২৮ সালের নির্বাচনের জন্য দলের প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা পরিচালনার দায়িত্ব দেবেন, এবং শিবকুমার ছাড়া অন্য কোনো মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী থাকবে না। চতুর্থ বিকল্পে খড়গে কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি হিসেবে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন, যা দলকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সহায়ক হতে পারে। পঞ্চম বিকল্পে, কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সিদ্দারামাইয়াকে দিল্লিতে রাজ্যসভার বিরোধী নেতা হিসেবে প্রেরণ করে খড়্গেকে কর্ণাটক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার প্রস্তাব দিতে পারে। এই বিকল্পগুলোকে সামনে রেখে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্দারামাইয়া এবং শিবকুমারকে দিল্লিতে তলব করার পরিকল্পনা করছে, যা আগামী রবিবার বা সোমবারের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

