বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মমতার তোপ, ভোটার তালিকা থেকে একটিও নাম বাদ গেলে মোদি সরকারের পতন অনিবার্য

কলকাতা, ৪ নভেম্বর : ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ধর্মতলা থেকে যাত্রা শুরু করে জোড়াসাঁকো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক নিবাস পর্যন্ত বিশাল মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন মিলে ভোটার তালিকা থেকে প্রকৃত ভোটারদের নাম মুছে দিয়ে নীরব অদৃশ্য রিগিং চালাচ্ছে। মমতা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন, যদি একজন প্রকৃত ভোটারের নামও বাদ দেওয়া হয়, তাহলে মোদি সরকারের পতন অনিবার্য হবে।

তাঁর ভাতুষ্পুত্র ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপি শাসিত অসম, ত্রিপুরা বা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে এই এসআইআর হচ্ছে না। অথচ কেরল, তামিলনাড়ু ও বাংলার মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে তা চলছে। এটা সুস্পষ্ট পক্ষপাতদুষ্টতা।”

আগামী বছরই কেরল, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে বিধানসভা নির্বাচন। সেই প্রেক্ষিতেই মমতার প্রশ্ন, নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এমন তাড়াহুড়ো কেন? ২০০২ সালে শেষ এসআইআর শেষ হতে দুই বছর লেগেছিল। এখন এক মাসে শেষ করতে হবে কেন? মোদি বাবু আর অমিত শাহকে খুশি করার জন্য?”

বিজেপির অভিযোগের জবাবে মমতা বলেন, বাংলা ভাষায় কথা বললেই কেউ বাংলাদেশি হয় না, উর্দু বললেই পাকিস্তানি হয় না। বাংলার পরিচয়কে এভাবে অপমান করা চলবে না। তিনি আরও বলেন, অমিত শাহ আমাদের পারিবারিক রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন, অথচ নিজের ছেলেকেই সর্বোচ্চ পদে বসিয়েছেন, এটাই তাঁদের দ্বিচারিতা।

নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, যদি কারও বাবা-মায়ের নাম তালিকায় না থাকে, তবে কি প্রমাণ দিতে হবে যে আমরা এই রাজ্যেরই সন্তান? নাগরিকত্ব প্রমাণের এই বিভ্রান্তি কে তৈরি করছে? মমতা জানান, আমরা আদালতে ও রাস্তায় দু’জায়গাতেই লড়ব। নির্বাচনের পর এসআইআর করলে আমরা সাহায্য করব, কিন্তু এখনই করা মানে স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তাঁর অভিযোগ, ভোটার ম্যাপিং-এর নামে ইতিমধ্যেই বহু মানুষের নাম বাদ যাচ্ছে, আতঙ্কে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এই বিশৃঙ্খলার পেছনে বিজেপিরই হাত। মানুষ আতঙ্কে মরছে, মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।

দ্রব্যমূল্য, নোটবন্দি ও আধার নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র কটাক্ষ করে মমতা বলেন, তোমরা আধার কার্ড করতে টাকা নিলে, এখন বলছো আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়! এ কেমন প্রহসন? তিনি আরও অভিযোগ করেন, ডায়মন্ড হারবারে বিজেপি কর্মীরা ব্যাংকের কর্মী সেজে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে। এদিন তিনি সকলকে সতর্ক করে দেন, বিএলও ছাড়া কাউকে তথ্য দেবেন না। যদি কেউ বাড়িতে না থাকে, তার নাম মুছে ফেলা যাবে না।

এক আবেগঘন বক্তব্যে মমতা বলেন, সাতবার সাংসদ, তিনবার মুখ্যমন্ত্রী, চারবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকেও কি আজ প্রমাণ দিতে হবে আমি বাংলাদেশি নই? তাঁর দাবি, বিজেপি ষড়যন্ত্র করে বাংলার প্রায় দুই কোটি ভোটারের নাম তালিকা থেকে মুছে দিতে চাইছে। শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা শুধু বাংলার লড়াই নয়, এটা ভারতের আত্মার লড়াই। ভোটাধিকার ও নাগরিকত্বের অধিকার রক্ষার লড়াই। আমরা লড়ব, প্রয়োজনে দিল্লিতেও লড়ব।