নয়াদিল্লি, ৩১ অক্টোবর: রাষ্ট্রীয় ঐক্য দিবস উপলক্ষে গুজরাটের একতা নগরে সারদার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে দেশকে উদ্দেশ করে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, আজকের ভারত সারদার প্যাটেলের স্বপ্নের ভারত , যে ভারত নিজের মর্যাদা ও নিরাপত্তায় কখনও আপস করে না। যদি কেউ ভারতের দিকে চোখ তুলে তাকায়, ভারত ঘরে ঢুকে মারে।
মোদী বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় গোটা বিশ্ব দেখেছে ভারতের সামরিক ক্ষমতা। আজ পাকিস্তান ও সন্ত্রাসের মদতদাতারা বুঝে গেছে, ভারত এখন আগের ভারত নয়। একতা নগরের স্ট্যাচু অব ইউনিটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের পর সারদার প্যাটেলের ‘আয়রন উইল’-এর প্রতিফলন আবার দেখা দিয়েছে দেশে। আজ অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর শৃঙ্খল ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর পুরোপুরি মূলধারায় যুক্ত হয়েছে।
তিনি কংগ্রেসের প্রতি কড়া আক্রমণ করে বলেন, সারদার প্যাটেল দেশের সার্বভৌমত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর যে সরকারগুলো ক্ষমতায় ছিল, তারা সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। কাশ্মীর সমস্যা, নকশালবাদ ও উত্তর-পূর্বে অস্থিরতা — এই দুর্বলতারই ফল।
মোদী অভিযোগ করেন, জওহরলাল নেহরু সারদার প্যাটেলের কাশ্মীর সংযুক্তির ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হতে দেননি। আলাদা সংবিধান, আলাদা পতাকা — এই ভুলের জন্য কাশ্মীর দশকের পর দশক জ্বলেছে। কংগ্রেস সারদার সাহেবকে ভুলে গিয়েছিল, কিন্তু আমরা তাঁকে ভুলিনি।
জাতীয় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ অনুপ্রবেশকারীরাই আমাদের ঐক্য ও নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকি। তারা আমাদের ভূমি ও সম্পদ দখল করছে, জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট করছে। আগের সরকারগুলো ভোটব্যাংকের রাজনীতির জন্য বিষয়টি উপেক্ষা করেছিল, কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে দেশকে রক্ষা করছি।
তিনি আরও বলেন, কিছু মানুষ স্বার্থের রাজনীতি করছে, অধিকার রক্ষার নামে দেশবিরোধী লড়াই করছে। এরা সারদার প্যাটেলের গড়া ঐক্যের ভিত্তিকে দুর্বল করছে। মোদী দেশের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আমাদের সরকারই প্রথম শহিদ পুলিশ সদস্যদের সম্মান জানিয়েছে ‘ন্যাশনাল পুলিশ মেমোরিয়াল’ প্রতিষ্ঠা করে। উপনিবেশিক মানসিকতা মুছে দিয়ে আমরা আমাদের রক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের ঐক্য শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি সাংস্কৃতিক ঐক্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে। ১২ জ্যোতির্লিঙ্গ, ৫১ শক্তিপীঠ, চারধাম — এই আধ্যাত্মিক শক্তিই ভারতের প্রকৃত বন্ধন।
তিনি সৌরাষ্ট্র–তামিল সংঘম ও কাশী–তামিল সংঘম-এর উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সাংস্কৃতিক সেতুগুলি প্রাচীন সম্পর্ককে নতুন করে জুড়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে বৈশ্বিক পরিচয় দিয়েছে।
ভাষণের আগে প্রধানমন্ত্রী স্ট্যাচু অব ইউনিটিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ‘একতা শপথ’ পাঠ করেন। তিনি বলেন, আমি দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা রক্ষার শপথ নিচ্ছি। সারদার প্যাটেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য।
সারদার প্যাটেলের ১৮২ মিটার উচ্চ মূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বার্তা ছিল স্পষ্ট এটাই সারদার প্যাটেলের ভারত, যে ভারত নিজের সম্মান ও নিরাপত্তা নিয়ে কখনও আপস করে না।

