নয়াদিল্লি, ৩১ অক্টোবর : দক্ষিণ এশিয়া-ভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদা ইন দ্য সাব-কনটিনেন্ট ভারতে ‘লোন উলফ’ বা একক হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, এটি সংগঠনের কৌশলগত দিক থেকে একটি বিপজ্জনক ও উদ্বেগজনক মোড়।
২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে আল-কায়েদার গঠিত হয়, মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় হামলা চালানো — বিশেষ করে ভারতকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম চালানো। সংগঠনটি অতীতে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের হাত থেকে “মুক্ত” করার হুমকি দিয়েছিল এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা আসিম উমর-কে ভারতের দায়িত্বে নিয়োগ করেছিল।
প্রথমদিকে উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ও উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে মডিউল গঠনের চেষ্টা করলেও, ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার তৎপরতায় তারা তেমন সফল হতে পারেনি। ফলে সংগঠনটি নতুন কৌশল নেয় — ‘লোন উলফ’ হামলার মাধ্যমে আঘাত হানার আহ্বান।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এই কৌশলটি মূলত ইসলামিক স্টেট-এর অনুসরণে তৈরি, যেখানে কম বিনিয়োগে, স্বল্প সময়ে ও নজর এড়িয়ে হামলা চালানোর সুযোগ থাকে।
পুনেতে গ্রেপ্তার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার: সন্ত্রাসের একক নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত মহারাষ্ট্রের অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড সম্প্রতি জুবায়ের হাঙ্গারগেকর নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি আল-কায়েদার অনলাইন প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে একক হামলার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানা গেছে।
জুবায়ের, মূলত সলাপুরের বাসিন্দা, পুনেতে একটি আইটি সংস্থায় সফটওয়্যার টেস্টিং ও ডেটাবেস ডেভেলপমেন্টে কর্মরত ছিলেন। এটিএস সূত্রে জানা গেছে, তাঁর কাছ থেকে একেএ–৪৭ বন্দুক হাতে ছবি ও বোমা তৈরির ছবি উদ্ধার হয়েছে। তদন্তে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তিনি একাই কাজ করছিলেন, যদিও অন্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন।
গোয়েন্দা সংস্থার উদ্বেগ: ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, আল-কায়েদার ‘লোন উলফ’ হামলার ডাক অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইসলামিক স্টেটের তুলনায় ভারতে আল-কায়েদার প্রভাব এখনো বেশি। তাদের নেটওয়ার্ক উত্তর, দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বিস্তৃত।
গোয়েন্দা মহলের মতে, ওসামা বিন লাদেন ও আয়মান আল-জাওয়াহিরির মৃত্যুর পরেও আল-কায়েদা সম্পূর্ণ বিলীন হয়নি; বরং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক সাফল্য সংগঠনের মনোবল বৃদ্ধি করেছে।
প্রচারণায় চরম উস্কানি: আল-কায়েদা তাদের অনলাইন প্রচারণায় সরাসরি উস্কানি দিচ্ছে।, এখন ট্রাক ধরো, ঘাস কাটার জন্য নয়, শত্রুদের হত্যা করার জন্য। যদি বিস্ফোরক তৈরি না করতে পারো, তবে গাড়ি দিয়ে তাদের চাপা দাও।
তারা পাথর, ছুরি বা উচ্চতা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়াকে-ও হামলার উপায় হিসেবে প্রচার করছে। এই ধরনের প্রচারণামূলক বার্তা সোশ্যাল মিডিয়া ও এনক্রিপ্টেড মেসেজিং চ্যানেলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করছে গোয়েন্দারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আল-কায়েদার এই নতুন কৌশল ভারতে নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সূচনা করছে, কারণ একক হামলাকারীদের সনাক্ত করা ও তাদের প্রতিরোধ করা প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রায় অসম্ভব।

