বেঙ্গালুরু, ১৯ অক্টোবর: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এক ঐতিহাসিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছে। ইসরোর চন্দ্রযান-২-এর কক্ষপথে থাকা অবস্থায় চাঁদের পাতলা বায়ুমণ্ডল বা এক্সোস্ফিয়ারে সূর্যের করোনাল মাস ইজেকশন-এর প্রভাব প্রথমবারের মতো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ সম্ভব হয়েছে চন্দ্রযান-২-এর ‘চেস-২’ যন্ত্রের মাধ্যমে। ২০২৪ সালের ১০ মে একটি বিরল সৌর ঘটনায় সূর্য থেকে একাধিক সিএমই নির্গত হয় এবং তা চাঁদের পৃষ্ঠে আঘাত হানে। এর ফলে চাঁদের দিনের দিকের এক্সোস্ফিয়ারে মোট চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানান, ওই সময় এক্সোস্ফিয়ারে নিরপেক্ষ পরমাণু ও অণুর ঘনত্ব দশ গুণেরও বেশি বেড়ে যায়, যা এতদিন শুধুমাত্র তাত্ত্বিকভাবে অনুমান করা হত। সরাসরি এই পর্যবেক্ষণ চাঁদের স্পেস ওয়েদার বা মহাকাশীয় আবহাওয়া নিয়ে গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। চাঁদের এক্সোস্ফিয়ার মূলত সূর্য বিকিরণ, সৌর বায়ু এবং উল্কা আঘাতের ফলে পৃষ্ঠ থেকে নির্গত হওয়া অণু ও পরমাণু দ্বারা গঠিত হয়। যেহেতু চাঁদের কোনও বৈশ্বিক চৌম্বকক্ষেত্র নেই, তাই সিএমই-এর মতো সৌর ঘটনাগুলির প্রভাব সেখানে অনেক বেশি প্রবল হয়।
এই গবেষণার বিস্তারিত তথ্য ২০২৫ সালের ১৬ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল জিও ফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার-এ, যার শিরোনাম ছিল “চন্দ্রযান-২ অরবিটারের উপর চেস-২ দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা চন্দ্র বহিঃমণ্ডলের উপর করোনাল ভর নির্গমনের প্রভাব”। ইসরো জানিয়েছে, সিএমই ঘটনার ফলে চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে আরও বেশি পরমাণু ছিটকে এক্সোস্ফিয়ারে মিলিত হয়, যার ফলে সাময়িকভাবে সেই পাতলা বায়ুমণ্ডলের চাপ বেড়ে যায়। এই পর্যবেক্ষণ কেবল চন্দ্র গবেষণায় নতুন তথ্য দিচ্ছে না, পাশাপাশি ভবিষ্যতে চাঁদের ওপর মানব বসতি গড়ে তোলার পরিকল্পনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ এই ধরনের সৌর ঝড়ের কারণে চন্দ্রপৃষ্ঠে সাময়িক পরিবেশগত পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা মানুষের জন্য গঠিত কোনও ঘাঁটির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ইসরো জানিয়েছে, এই সাফল্য ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিশা দেখাল এবং চাঁদের পরিবেশ ও সৌর বিকিরণের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া আরও গভীর হল। ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযান ও লুনার ঘাঁটি নির্মাণে এই পর্যবেক্ষণ এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

