জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় ‘4C সূত্র’ প্রস্তাব প্রতিরক্ষামন্ত্রীর — ইউএন শান্তিরক্ষা মিশনে ভারতীয় অবদান গর্বের: রাজনাথ সিং

নয়াদিল্লি, ১৪ অক্টোবর: নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপুঞ্জের ট্রুপ কনট্রিবিউটিং কান্ট্রিজ চিফস্‌ কনক্লেভের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিরক্ষা মিশনের উন্নত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে ‘4C সূত্র’ প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শান্তিরক্ষার জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান—পরামর্শ, সহযোগিতা, সমন্বয় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি —শান্তিরক্ষা মিশনের মূল দিকনির্দেশনা হওয়া উচিত। রাজনাথ সিং বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষীদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নতুন চ্যালেঞ্জগুলির কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, আজকের শান্তিরক্ষীরা কাজ করছেন এমন সব পরিবেশে, যেখানে প্রচলিত যুদ্ধের বাইরে সন্ত্রাসবাদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানবিক সংকট, মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ভুয়ো তথ্যপ্রচারের মতো সমস্যা রয়েছে। এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শুধুমাত্র সাহস নয়, প্রয়োজন অভিযোজনশীলতা, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি এবং একটি পূর্ণাঙ্গ মিশনস্তরের কৌশল।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রযুক্তিগত ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলিকে শান্তিরক্ষা মিশনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলি যদি সৈন্য, পুলিশ, লজিস্টিক, প্রযুক্তি এবং বিশেষায়িত দক্ষতা দিয়ে সহযোগিতা করে, তাহলে শান্তিরক্ষা মিশন অনেক বেশি কার্যকর ও সুরক্ষিত হবে। সুরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থা, নজরদারি প্রযুক্তি এবং ড্রোনের মতো মানবহীন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন।

ভারতের অবদানের কথা উল্লেখ করে রাজনাথ সিং বলেন, এখনও পর্যন্ত ২.৯ লক্ষের বেশি ভারতীয় শান্তিরক্ষী ৫০টিরও বেশি রাষ্ট্রপুঞ্জ মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। কঙ্গো থেকে শুরু করে কোরিয়া, দক্ষিণ সুদান থেকে লেবানন—সব ক্ষেত্রেই ভারতীয় শান্তিরক্ষীরা তাদের সাহস, নিষ্ঠা ও মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ভারত শুধু শান্তিরক্ষী পাঠাতেই নয়, বরং নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে এবং মিশনের গঠনগত সংস্কারে সহায়তা করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

নারীদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে লাইবেরিয়াতে মোতায়েন ভারতীয় সর্ব-মহিলা পুলিশ ইউনিট একটি বিশ্বজনীন উদাহরণ হয়ে উঠেছে। আজ ভারতীয় নারী শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালে কঙ্গোতে মোতায়েন ভারতীয় সেনার মেজর রাধিকা সেন রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘মিলিটারি জেন্ডার অ্যাডভোকেট অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কারে সম্মানিত হন, যা ভারতীয় শান্তিরক্ষীদের নারী নেতৃত্বের মর্যাদা বহন করে।

শান্তিরক্ষা মিশনে ভারতীয় মেডিকেল টিমের ভূমিকা নিয়েও প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের ফিল্ড হাসপাতালে ভারতীয় চিকিৎসা দলগুলির কাজ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহানুভূতির প্রতিফলন ঘটায়। বক্তৃতার শেষভাগে রাজনাথ সিং বলেন, ভারতের ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা আধিপত্য নয়, বরং সমবায় ও অন্তর্ভুক্তির পথে এগিয়ে চলার ভাবনাকে তুলে ধরে। এই দৃষ্টিভঙ্গির মূল ভিত্তি মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা ও সত্যের আদর্শ।