আগরতলা, ১৩ অক্টোবর: স্বাধীনতার ৭৮ বছর পরেও দেশভাগের বলি হয়ে বাঙালি জাতি আজও ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতালোভ, কূটনৈতিক ষড়যন্ত্র ও প্রশাসনিক অবহেলার ফলে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব, সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার আজও প্রশ্নের মুখে। সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় সরকারের এসআইআর- এর মতো উদ্যোগ বাঙালিদের রাষ্ট্রহীন করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে বলে আশঙ্কা আমরা বাঙালির।
আমরা বাঙালির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের মতো বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসার জন্য নানা কূটনৈতিক বুদ্ধি ও প্রশাসনিক চাতুর্য ব্যবহার করে। দেশভাগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাঙালি জাতিকে যেভাবে বারবার দাবিয়ে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। ইতিহাসবিদদের মতে, দেশভাগের পূর্বে যেসব বিশ্বাসঘাতক দল ব্রিটিশদের সহযোগিতা করেছিল, তারাই স্বাধীনতার পর শাসনক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের বলি হয়েই পূর্ববঙ্গ, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনার মতো বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চল ভারতের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।
আরও বলেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ যদি সর্বসম্মতভাবে দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা পেত, তবে দেশভাগ রোখা সম্ভব হতো। কিন্তু সে সময় অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতৃত্ব চায়নি বাঙালির হাতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা আসুক। নেতাজীর অন্তর্ধানের পর তাঁকে ও তাঁর উত্তরসূরিদের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে এই মনোভাবই কাজ করেছে বলে অভিযোগ।
অসমে এনআরসি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে ‘ডি-ভোটার’ তকমা দিয়ে রাষ্ট্রহীন করার চেষ্টা হয়েছে। একইভাবে, ত্রিপুরায় এডিসি আইনের মাধ্যমে জাতি ও উপজাতির মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। বিহারেও এসআইআর-এর নামে বিপুল সংখ্যক বাঙালির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে। যদিও কেন্দ্র সরকার হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। বরং সিএএ এখনো প্রয়োগে অনিশ্চয়তা, এনআরসি ও এসআইআর-এর চাপের মাঝে বাঙালিদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
স্বাধীন ভারতে যখন বিভিন্ন ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠিত হয়েছে, তখন বাঙালির জন্য আলাদা কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বাংলাভাষীদের নিজ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেই আজ ‘বাংলাদেশি’ অপবাদে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলার ভূখণ্ডের একাংশ জুড়ে দেওয়া হয়েছে অসম, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে। এর ফলে ধীরে ধীরে একটি জাতির ভাষা, কৃষ্টি ও ইতিহাস বিলুপ্তির পথে।

