কলকাতা, ১২ অক্টোবর : দুর্গাপুরে এমবিবিএস ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মেয়েদের রাতে কলেজের বাইরে যাওয়া উচিত নয়। নিজেদেরও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে।” তাঁর এই মন্তব্যকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাতে মেয়েদের বাইরে যেতে দেওয়া উচিত নয়। ওদের নিজেদেরও সুরক্ষার বিষয়টা ভাবা উচিত। জায়গাটা জঙ্গলের পাশেই। পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। কেউ ছাড় পাবে না। যারা দোষী, তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।”
এই বক্তব্যে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী একপ্রকার ঘটনার দায় ছাত্রীর উপরই চাপিয়ে দিলেন। সমাজকর্মীদের মতে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস যথাযথ হলেও, মেয়েদের চলাফেরার স্বাধীনতা নিয়ে এমন মন্তব্য একধরনের ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করা বা নির্যাতিতাকে দোষারোপ করার নামান্তর।
ওড়িশার জালেশ্বরের বাসিন্দা, দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শনিবার রাতে এক সহপাঠীর সঙ্গে খাবার আনতে বাইরে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, তখন আরও দুই-তিনজন যুবক এসে তাঁকে অপহরণ করে গণধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর তাঁকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। অভিযোগ, তাঁর সহপাঠীও তখন তাঁকে “অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যান।”
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, অপরাধীদের কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বিরোধী দলগুলি ও নারী অধিকার সংগঠনগুলো কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তাঁদের মতে, সরকারের কাজ হওয়া উচিত অপরাধ দমন ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাঁদের স্বাধীনতা খর্ব করা নয়।
বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে অপরাধীদের বার্তা যায় না, বরং নারীদের উপরই সমাজের চাপ ও দায়বদ্ধতা আরও বাড়ে।
দুর্গাপুর গণধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার হলেও মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে একবার আরও প্রশ্ন উঠে গেল। প্রশাসনের উপর এখন দায়িত্ব—শুধু দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা নয়, নারীদের নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করাও।

