কৃষি দক্ষতা উন্নয়নে নতুন দিগন্ত: কৃষকদের ‘ব্যবসায়ী’ বানাতে এগিয়ে এল কেন্দ্র

নয়াদিল্লি, ৬ অক্টোবর : ভারতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে এবং প্রায় অর্ধেক মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। এ অবস্থায় কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছে। শুধু ঋণ বা বীজ পাওয়াই নয়, আধুনিক কৃষকদের এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তন, উর্বর মাটি রক্ষা, কৃষি যন্ত্রপাতি দক্ষভাবে ব্যবহার এবং বাজারজাতকরণের নতুন উদ্ভাবনী পদ্ধতি নিয়ে। গত এক দশকে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে নতুন প্রযুক্তি, প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান এবং কর্মদক্ষতা সরবরাহ করছে, যাতে তারা কেবল চাষী নয়, পরিকল্পনাকারী, চিন্তাবিদ এবং সম্পূর্ণ কৃষি সরবরাহ শৃঙ্খলের সক্রিয় অংশীদার হয়ে উঠতে পারে।

এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র। জেলা পর্যায়ে স্থাপিত এই কেন্দ্রগুলো ভারতীয় কৃষি গবেষণা পর্ষদ-এর অধীনে পরিচালিত হয় এবং বৈজ্ঞানিক ফলাফলকে মাঠের সঙ্গে সংযুক্ত করে। তারা স্থানীয় মাটি ও আবহাওয়ার উপযোগী প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং ক্লাসের মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি দক্ষতা প্রদান করে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র ৫৮.০২ লাখ কৃষকের কাছে পৌঁছেছে। এই সময়কালে অংশগ্রহণের পরিসংখ্যান বার্ষিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে—২০২১–২২ সালে ১৬.৯১ লাখ, ২০২২–২৩ সালে ১৯.৫৩ লাখ, এবং ২০২৩–২৪ সালে ২১.৫৬ লাখ। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরও ১৮.৫৬ লাখ কৃষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

কৃষি প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা সংস্থা রাজ্যগুলোর পরামর্শদাতা নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে সহায়তা করছে। কৃষক-কেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা, কৃষি ভ্রমণ ও গ্রুপ ক্লাসের মাধ্যমে তারা উদ্ভাবনী পদ্ধতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। ২০২১–২২ সালে ৩২.৩৮ লাখ, ২০২২–২৩ সালে ৪০.১১ লাখ এবং ২০২৩–২৪ সালে ৩৬.৬০ লাখ কৃষক আত্মা-এর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আরও ১৮.৩০ লাখ কৃষক অংশ নিয়েছেন, যা ২০২১–২৫ সালের মধ্যে মোট প্রায় ১.২৭ কোটি।

গ্রামীণ যুবক ও যুবতীদেরও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রামীণ যুবদের দক্ষতা প্রশিক্ষণ, প্রোগ্রাম সাত দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। মাছ চাষ, পশুপালন, দুগ্ধজাত উৎপাদন এবং ফলচাষে প্রশিক্ষণ দিয়ে এটি কর্মসংস্থান, স্বনিয়ন্ত্রণ ও দক্ষ গোষ্ঠী গঠনে সহায়তা করে। ২০২১–২২ সালে ১০,৪৫৬ জন, ২০২২–২৩ সালে ১১,৬৩৪ জন, এবং ২০২৩–২৪ সালে ২০,৯৪০ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের শেষে আরও ৮,৭৬১ জন যুক্ত হন।

রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা এর অধীনে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সংক্রান্ত উপ-মিশন ছোট ও সীমিত সম্পদের কৃষকদের মেশিন ব্যবহারে সহায়তা করে। ২০২১–২৫ সালের মধ্যে ৫৭,১৩৯ কৃষক প্রশিক্ষিত হন। এ উদ্যোগ ব্যয় কমায় এবং কাজের গতি বাড়ায়। সইল স্বাস্থ্য কার্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫.১৭ কোটি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে, ৬.৮ লাখ পরীক্ষা ও ৯৩ হাজার প্রশিক্ষণ সেশন পরিচালিত হয়েছে, যার ফলে মাটির গুণগত মান ও ফসলের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষক উৎপাদক সংগঠন অনলাইন সেমিনার ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের বাজার সংযোগ, ব্যবসায়িক পরিচালনা ও ই-ন্যাম প্ল্যাটফর্মে পরিচিতি বৃদ্ধি করছে। ২০২২–২৬ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা কৃষি খাতে অল্প-মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। ২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১.৬৪ কোটি মানুষ প্রশিক্ষিত হয়েছে, যার মধ্যে ১.২৯ কোটি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে।

এই সকল উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে কৃষকরা শুধু চাষী নয়, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হিসেবেও গড়ে উঠছেন। বর্তমানে দেশে ২,৮০০টি এগ্রিটেক কোম্পানি ক্ষুদ্র কৃষকদের সরাসরি বিক্রয় ও প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে সহায়তা করছে। নিনজাকার্ট-এর মতো ব্যবসা কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীকে সংযুক্ত করে আয় বৃদ্ধি করছে। স্কিল ইন্ডিয়া এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা সমবায় গঠন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দরাদরি ও স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন।

মোটকথা, দক্ষতা উন্নয়ন এখন ভারতের কৃষি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেভিকে ও এটিএমএ থেকে পিএমকেভিওয়াই-র লক্ষ্যভিত্তিক কাজ পর্যন্ত, কৃষকরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে তাদের চাষাবাদ উন্নত ও ব্যবসায়িক দিকেও এগোতে পারছেন। এটি কেবল ফলন ও আয় বৃদ্ধি করছে না, গ্রামীণ ভিত্তিক শক্তিশালী করছে এবং গ্রামের মানুষের জীবনে আনন্দ ফিরিয়ে দিচ্ছে।